টিভি২৪ ডেস্ক : বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) সদস্যদের ভ্যাট সম্পর্কিত সম্যক ধারণা প্রদান করতে ‘প্র্যাকটিক্যাল ওয়ার্কশপ অন ভ্যাট প্রসিডিউর’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে। ৩১ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত এই ভ্যাট প্রশিক্ষণ বিষয়ক দুই দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ভ্যাট যোগ্যতা, উৎসেকর সমন্বয়, কর চালান পত্র, ক্রেডিট নোট ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে দর্শনার্থীদের একটি স্বচ্ছ ধারণা প্রদান করেন।
০১ নভেম্বর (রবিবার) অনলাইনে দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষন কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। সমাপণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বিসিএস এর প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। মন্ত্রীত্ব পাওয়ার পর গণভবন থেকে আমি সরাসরি বিসিএস এ এসেছিলাম। তাই বিসিএস সদস্যদের কল্যাণে যেকোন কাজে আমাকে সবসময় পাবেন। ভ্যাট প্রক্রিয়া একটি জটিল বিষয়। ভ্যাটের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজ এখনো চলমান। আমি মনে করি, এই কাজটি যদি দেশের ছেলেদের দিয়ে করানো হতো, তাহলে আমাদের ঝুলে থাকতে হতো না। ভ্যাট বিষয়টা এমনি জটিল যে, আমরা যখন সাবেক অর্থমন্ত্রী সাহেবের কাছে ইন্টারনেটের উপর ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব পাশ করালাম দেখা গেলো দেশে ইন্টারনেটের মূল্য বেড়ে গেলো।
বিসিএস সদস্যদের ভ্যাট প্রদানের বিষয়ে ভ্যাট কর্মকর্তাদের উপদেশ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ভ্যাট প্রশিক্ষণ বিসিএস সদস্যদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভ্যাট কর্মকর্তাদের উচিৎ দেশীয় প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানদের থেকে ভ্যাট আদায়ের ব্যাপারে দৃষ্টি আরোপ করা। আপনাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যতোটা মনোযোগী দেখা যায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে চিত্র পুরো উল্টো। শুধু ফেসবুক থেকে যে পরিমাণ ভ্যাট আদায় করা সম্ভব তা কম্পিউটার ইন্ডাস্ট্রির আদায়কৃত ভ্যাটের ১০ গুণ হবে। আপনারা প্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের প্রতি সদয় হোন। বিদেশি প্রতিষ্ঠান যারা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে তাদের ব্যাপারে কঠোর হোন।
ভ্যাটের উপর কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিএস ট্যাক্স ভ্যাট অ্যান্ড কাস্টমস অ্যাফেয়ার্স সাব কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল ফাত্তাহ। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের জন্য ভ্যাট প্রক্রিয়াকে সহজীকরণ করা এখন সময়ের দাবী।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) এর কো-অর্ডিনেটর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ.এইচ.এম. শফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, আইবিপিসি বিসিএস এর উদ্যোগের পাশে রয়েছে।
সমাপণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য বিক্রিতে বিক্রেতাদের লাভের অংশ খুব কম থাকে। তার উপর যদি ভ্যাট রিফান্ডের ছয় মাসের সময়সীমা থাকে সেটা গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো। বিসিএস কার্যকরী কমিটি মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এনবিআরের সঙ্গে বসে এই বিষয়টিকে সহজ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।
বিসিএস যুগ্ম মহাসচিব মো. মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন এর সঞ্চালনায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করেন ভ্যাট অনলাইন প্রজেক্টের পরিচালক এবং কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান। অনলাইনে প্রায় দুই শতাধিক বিসিএস সদস্য এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি বিসিএস এর ফেসবুক পেজে প্রচারিত হয়। এসময় প্রায় ১৩০০ দর্শনার্থী প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপভোগ করেন।
ভ্যাট বিষয়ে ব্যবহারিক জ্ঞান সম্যক ধারণা দিয়ে কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে ভ্যাট দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহার করেও কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে ভ্যাট প্রদান করা যাবে। ভবিষ্যতে এই সেবা আরো বিস্তৃত হবে। তিনি ভ্যাট প্রদানের ক্ষেত্রে নিজেই কিভাবে অনলাইনে ভ্যাট প্রদান করবেন সে ব্যাপারে একটি ব্যবহারিক উপস্থাপনা প্রদান করেন। এসময় তিনি সদস্যদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বও সম্পন্ন করেন।
ভ্যাট বিষয়ক কর্মশালায় মাসনুনস কম্পিউটার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল ইসলাম এবং বিসিএস সহসভাপতি মো. জাবেদুর রহমান শাহীন বক্তব্য প্রদান করেন।