টেকভিশন২৪ ডেস্ক: বাংলাদেশের উপকূলের পিছিয়ে পড়া মেয়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ঢাকায় আয়োজিত হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক স্থান পরিদর্শনমূলক আয়োজন অবাক কৌতুহলে। স্টেম অ্যান্ড আইসিটি স্কিলস ফর দ্য গার্লস অব কোস্টাল এরিয়া প্রকল্পের আওতায় গত ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি দিনভর ঢাকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীরা।
সফটওয়্যার ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ব্রেইনস্টেশন ২৩ ঘুরে যারপরনাই খুশি খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার কমরেড রতনসেন কলেজিয়েট গার্লস হাই স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সায়মা সাদিয়া ঝিলিক। তার মতে আজ সে এই অফিস পরিদর্শনে এলেও কোন একদিন নিশ্চই সে এরকম প্রতিষ্ঠানের কর্মী হয়ে ঢাকায় ফিরবে। প্রতিষ্ঠানটির নারী কর্মীদের গল্প বেশ অনুপ্রাণিত করে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার শহীদ আলি আহমেদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শাহরিয়া সুলতানা শাকিলাকে। সে বলে, ‘গ্রামে যেটুকু পড়াশুনা করি আমি ভাবতাম সেটাই অনেক বেশী, কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের আপুদের গল্প শুনে মনে হয়েছে আমার এলাকার বাইরেও একটা বিস্তৃত জগত রয়েছে যেখানে প্রবেশ করতে আমাকে আরো অনেক বেশী পরিশ্রম আর সাধনা করতে হবে’।
ঝিলিক ও শাকিলার মত প্রায় ৩৬ জন শিক্ষার্থী গত ৬ ফেব্রুয়ারি বাসযোগে ঢাকা আসে রাজধানী শহর ঢাকা ঘুরে দেখার উদ্দেশ্যে। তিনটি ভিন্ন এলাকার ছয়টি পৃথক বিদ্যালয় থেকে এলেও পুরো সফর তাদের একক বন্ধনে মিলিয়ে দেয়। তারা নিজেদের মাঝে পরিচিত হয় এবং পুরো আয়োজনটি পরস্পরের সহযোগিতায় আনন্দের সাথে উপভোগ করে। ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে তাদের ঢাকা পরিদর্শন শুরু হয়। কলা ভবনের অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যের সামনে থেকে কলা ভবন, শহীদ মিনার, টিএসসি, কার্জন হল হয়ে তারা যায় তথ্য প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটে। এরপর বিকেলে যায় সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান ব্রেইনস্টেশন ২৩ এর কার্যালয়ে। সেখানে নিজেদের কাজ ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিয়ে কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত নারী কর্মীরা। তাদের কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও একাগ্রতা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে।
একই দিন সন্ধ্যায় ডরমেটরিতে তাদের সাথে কথা বলতে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল, আইটি উদ্যোক্তা সৈয়দা কামরুন আহমেদ ও বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সভাপতি মুনির হাসান। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সারাদিনের গল্প শুনে তাদের প্রাণশক্তি ও উদ্দীপনা দেখে অভিভূত হন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের কথা শোনেন এবং জানান কিভাবে তারা এই স্বপ্নের পথে এগোতে পারে। এই মুক্ত আলোচনায় বাল্যবিবাহের নেতিবাচক দিকের কথাও উঠে আসে। রূপসার এক শিক্ষার্থী নওরিন জানায় তাদের এক বন্ধুর বাল্যবিবাহ তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং স্থানীয় প্রসাশনের সহযোগিতায় আটকাতে সমর্থ হয়। সেই বন্ধুটি এখন পুরোদমে তার পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার বাবা-মা কে বুঝিয়ে এই পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়াটা এখনো বেশ শক্ত। তাই তারা মনে করে এই বাল্যবিবাহ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদেরকেও আরো সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া উচিত।
৮ ফেব্রুয়ারি সকালে তারা সংসদ ভবন এর সামনে এর ইতিহাস ও স্থাপনা সপর্কে জানে। এরপর যায় বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর যেখানে জাদুঘরের দায়িত্বরত কর্মকর্তা পুরো জাদুঘরটি তাদের ঘুরিয়ে দেখায় এবং এর বিস্তারিত বর্ণণা করেন। বিকেলে তারা ঘুরে দেখে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর। সেখানে মজার বিজ্ঞান প্রদর্শনশালা, মহাকাশ বিজ্ঞান প্রদর্শনশালা, ইনোভেশন গ্যালারি, বিভিন্ন ল্যাব শিক্ষার্থীদের আলোকিত করে। রূপসা উপজেলার নৈহাটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ফাতেমা আক্তার শাহনাজ এর সবচেয়ে বেশী ভালো লেগেছে ভৌত বিজ্ঞান প্রদর্শনশালা। সে বলে, ‘পাঠ্যবই এ আমরা যা পড়েছি এখানে তার বাস্তবিক প্রয়োগ দেখতে পেরেছি। নিজে হাতে কলমে নিউটনের তৃতীয় সুত্রের প্রয়োগ, মাধ্যাকর্ষণ বল, ব্যারোমিটার, কেন্দ্রবিমুখী বল ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় দেখার পর এগুলো আমার এখন আরো সহজবোধ্য মনে হচ্ছে’।
মেয়েদের সঙ্গে আসা কমরেড রতনসেন বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা স্বপ্না রানী বিশ্বাস বলেন, ‘বাল্যবিবাহের মত প্রকট সমস্যাযুক্ত একটা এলাকার মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য এমন আয়োজন আরো বেশী হওয়া প্রয়োজন। এমন আয়োজন ওদের জগৎটাকে প্রসারিত করবে, ওদের চিন্তার পরিধিকে আরো বাড়াবে। আমি মনে করি বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে মেয়েদের কর্মক্ষত্রে নিয়ে আসতে একটা বড় অবদান রাখতে পারে অবাক কুতুহলে’।
ঢাকা পরিদর্শন শেষে আজ ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের কার্যালয় প্রদর্শনের পর ভবিষ্যত কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী দক্ষতা অর্জনের প্রস্তুতি নেয়ার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে নিজ এলাকার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ে শিক্ষার্থীরা।
মালালা ফান্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় স্টেম এন্ড আইসিটি স্কিলস ফর দ্য গার্লস অফ কোস্টাল এরিয়া (SISGCA) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বিডিওএসএনের ‘মিসিংডটার’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আয়োজিত হয় অবাক কৌতুহলে-২০২৫।