টেকভিশন২৪ ডেস্ক: ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) মোট ৩ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে গ্রামীণফোন লিমিটেড, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ কম। মূলত চ্যালেঞ্জিং সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে কোম্পানির আয়ে। প্রথম প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির মোট গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৪৮ লাখে। গ্রামীণফোনের মোট গ্রাহকের ৫৭ শতাংশ, অর্থাৎ ৪ কোটি ৮৩ লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করছেন।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান বলেন, “চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক পরিবেশের মধ্যেও, কৌশলগত উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের আর্থিক কর্মক্ষমতা উন্নত হচ্ছে। এই প্রান্তিকেও ইন্টারনেটের গ্রাহকসংখ্যা ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু ইন্টারনেটের মূল্য ১৭ শতাংশ হ্রাসের প্রভাবে গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় রাজস্ব কমেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও নেটওয়ার্ক অবকাঠামো রূপান্তরের মধ্য দিয়ে আমরা উদ্ভাবনের এক নতুন যুগে প্রবেশ করছি, যা দেশে একটি ডেটা ও ডিজিটালকেন্দ্রিক অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি করছে। প্রযুক্তিগত রূপান্তরের ক্ষেত্রে প্রতি প্রান্তিকেই আমরা কার্যকরী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছি যা গ্রাহকদের আমাদের প্রতি আস্থা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী অভিজ্ঞতা প্রদান করছে। “
তিনি আরও বলেন, “টেকসই অগ্রগতি গ্রামীণফোনের প্রবৃদ্ধি ও বিশেষত্বের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি প্রকল্পের আওতায় গত বছর ৩১ লাখেরও বেশি মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, আর এই প্রান্তিকে আমরা আরও ২ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষকে দক্ষতা উন্নয়নের আওতায় এনেছি, যাদের বেশিরভাগই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারী। আমাদের লক্ষ্য খুব পরিষ্কার- সামনের দিনে উদ্ভাবনের এই ধারা অব্যাহত রাখতে চাই আমরা। আমরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ, কার্যক্রমে ডিজিটাল রূপান্তর এবং গ্রাহক অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করার ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ। ইতোমধ্যে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রাথমিক ইঙ্গিত সুস্পষ্ট এবং আমরা আত্মবিশ্বাসী যে খুব শিগগিরই গ্রামীণফোনের ব্যবসা আবারও প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরবে।“
গ্রামীণফোনের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) অটো মাগনে রিসব্যাক বলেন, “অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের যে ইঙ্গিত গত প্রান্তিকে পেয়েছিলাম, তা ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। ফলে ডেটা ব্যবহারে প্রবৃদ্ধি ও গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধি উভয় ক্ষেত্রে ইতিবাচক ধারা ফিরে এসেছে। পরপর দুই প্রান্তিকে এআরপিইউ (গ্রাহক প্রতি গড় আয়) হ্রাসের পর অবশেষে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে এআরপিইউ বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্বের বছরগুলোর তুলনায় এ বছর আমাদের মোট রাজস্ব ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। মূলত ব্যয়ের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের অতিরিক্ত সতর্কতার ফলে এমনটি ঘটেছে। তবে অধিবর্ষের (লিপ-ইয়ার) প্রভাব বাদ দিলে পূর্বের বছরের পারফরম্যান্স বিবেচনায় মাত্র ১ শতাংশ পিছিয়ে আছি আমরা। দক্ষ পরিচালন ব্যবস্থা এবং সঠিকভাবে মূলধন বরাদ্দের ফলে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে আমাদের ইবিআইটিডিএ’র পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২০০ কোটি টাকায় এবং ইবিটিডিএ মার্জিনের পরিমাণ ৫৭ শতাংশের বেশি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী কর পরবর্তী মোট মুনাফার (এনপিএটি) পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ৫৩ শতাংশ কমেছে। তবে এককালীন ট্যাক্স প্রভিশন রিভার্সাল ছাড়া এই হ্রাসের পরিমাণ ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে রাজস্ব আয় হ্রাস, ধারাবাহিক আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে উচ্চ ব্যয় ও অবচয় এবং ব্যালেন্স শিট পুনর্মূল্যায়নে মুদ্রার (বিডিটি) দুর্বল অবস্থানের প্রভাবে উচ্চ আর্থিক ব্যয়।“