ডিজিটাল পেমেন্ট জিডিপিতে যোগ করবে ৫০ হাজার কোটি টাকা

ডিজিটাল পেমেন্ট

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: দেশের প্রচলিত লেনদেনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পেমেন্ট নিশ্চিত করা সম্ভব হলে বাংলাদেশের বার্ষিক মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১.৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে, যা মোট ডিজিপিতে প্রায় ৫০,০৫৮ কোটি টাকা (৬.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) যোগ করতে পারে। জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন জোট ‘বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্স’ এবং এর সদস্য বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ফ্ল্যাগশীপ প্রোগ্রাম এটুআই পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব এম. এ. মান্নান এমপি আজ অনলাইনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘মেজারিং প্রোগ্রেস টু স্কেল রেসপনসিভ ডিজিটাল পেমেন্টস ইন বাংলাদেশ’ এবং ‘ন্যাশনাল ডিজিটাল পেমেন্টস রোডম্যাপ ২০২২’ শীর্ষক দু’টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এম. এ. মান্নান এমপি বলেন, গত ১৩ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বের সেরা ২৫ অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃতির পথে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাই এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে সাথে নিয়ে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্র পরিণত হতে চাই। সেক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আর বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান অঙ্গীকারই হলো ডিজিটাইজেশন। ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা একটি ক্যাশ-লেস সোসাইটি গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। সেইসাথে দারিদ্রতা দূর করে সমাজের নিম্নআয়ের মানুষদের অর্থের যোগান বাড়ানোর মাধ্যমে তাদেরও ক্যাশ-লেস সোসাইটির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

ডিজিটাল পেমেন্ট 01
‘মেজারিং প্রোগ্রেস টু স্কেল রেসপনসিভ ডিজিটাল পেমেন্টস ইন বাংলাদেশ’ এবং ‘ন্যাশনাল ডিজিটাল পেমেন্টস রোডম্যাপ ২০২২’

এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর জনাব আনীর চৌধুরী বলেন, এমন অনেক খাত রয়েছে যেখানে ডিজিটাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে আমরা ইতোমধ্যেই অসাধারণ উন্নতি করেছি। ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম উন্নয়ন এবং এর সম্ভাবনাময় সুবিধা পেতে এর উপর নির্ভর অবকাঠামোগত উন্নয়নও সমানভাবে বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা একটি নির্ভরযোগ্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। যার উপর ভিত্তি করে ডিজিটাল পেমেন্ট এবং সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।

বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্সের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্যামেলিও তেলেজ বলেন, বাংলাদেশ সাত বছর আগে বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্সের সাথে যুক্ত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির সাথে সাথে ডিজিটাল লেনদেন গত ৫ বছরে প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যার ফলে ডিজিটালভাবে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা, মজুরি এবং প্রণোদনা প্যাকেজ নাগরিক ও শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। আমরা দেশব্যাপী, বিশেষ করে নারীদেরকে ডিজিটাল পেমেন্ট বিষয়ে আগ্রহী করে তোলতে বাংলাদেশের সাথে ভবিষ্যতেও কাজ করে যেতে চাই। সেই সাথে ডিজিটাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প গ্লোবাল অ্যালায়েন্সভুক্ত আমাদের অন্যান্য সদস্য দেশের সাথে শেয়ার করবো।”

 প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উল্লেখিত জিডিপির ৫৩ শতাংশ আসবে ক্ষুদ্র পর্যায়ে মাইক্রো-মার্চেন্ট লেনদেন থেকে, ৪৫ শতাংশ কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ ডিজিটাইজের মাধ্যমে এবং অবশিষ্টাংশ আসবে তৈরি পোশাকের (আরএমজি) অনানুষ্ঠানিক খাতে ডিজিটাল মজুরি প্রদানের মাধ্যমে। নারীদেরকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই খাতগুলোতে জড়িত অর্থ লেনদেন ডিজিটাইজ করতে পারলে 2030 সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথকেও ত্বরান্বিত করবে।

২০১৫ সালে বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্স-এ যোগদানের পর প্রাথমিক এবং সর্বশেষ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রযাত্রায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে বাংলাদেশ। এই গবেষণার উপর ভিত্তি করে, জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন জোট বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্স ও বাংলাদেশ সরকার সম্মিলিতভাবে ডিজিটাল পেমেন্ট রোডম্যাপ ২০২২-২০২৫ তৈরি করেছে। নতুন এই রোডম্যাপটি তৈরি পোশাক খাত, ক্ষুদ্র, কৃষি, স্বাস্থ্য, এবং শিক্ষার অগ্রাধিকার খাতে আগামী তিন বছরে একটি নিরাপদ, ইন্টারঅপারেবল, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য 22টি সমাধানের পথ চিহ্নিত করেছে।

অনুষ্ঠানে জার্নি টুওয়ারর্ড এ ক্যাশ-লাইট সোসাইটি সম্পর্কে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোঃ খুরশীদ আলম, প্রতিবেদন প্রকাশের উদ্দেশ্য ও ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর জনাব আনীর চৌধুরী এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সম্পর্কিত জাতিসংঘের নীতি নিয়ে আলোচনা করেন বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্সের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্যামেলিও তেলেজ। এছাড়াও ন্যাশনাল ডিজিটাল পেমেন্ট ডায়গনস্টিক অ্যান্ড রোডম্যাপ ২০২২ এর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্সের এশিয়া প্যাসিফিক প্রধান জনাব কীযোম নাগোদুপ মাসালি এবং বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্সের বাংলাদেশ-লিড জনাব নাবিলা খোরশীদ।

এটুআই:

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এর আওতাধীন এবং ইউএনডিপি সহায়তায় পরিচালিত এটুআই সরকারি সেবা প্রদান প্রক্রিয়ার উৎকর্ষ সাধনে এবং সেবাসমূহকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য এবং সহজলভ্য করে নাগরিক-কেন্দ্রিক উদ্ভাবনী সংস্কৃতি প্রবর্তনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করছে। বাংলাদেশ সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়েছে। উদ্ভাবনীয় উদ্যোগগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে সহায়তা প্রদান করে টেকসই প্রভাব অর্জনে উৎসাহিত করা, টিকিয়ে রাখা এবং আরও উন্নত করা, সরকারি সেবা প্রদানের উদ্ভাবন প্রক্রিয়ায় বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে এটুআই।

বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্স:

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে নগদ লেনদেনগুলোকে যথাযথ ডিজিটাল পেমেন্টে রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার, কোম্পানি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করে জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন জোট বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্স। বর্তমানে এই অ্যালিয়েন্সভুক্ত ৪০ সদস্য রয়েছে। যারা দক্ষতা, স্বচ্ছতা, অর্থনৈতিক কার্যকলাপে নারীদের অংশগ্রহণ এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর জন্য অর্থ লেনদেনের ডিজিটালাইজেশন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ডিজিটাল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গড়ে তোলতে কাজ করে যাচ্ছে। আরও বিস্তারিত জানার জন্য ‍ভিজিট করুন https://www.betterthancash.org/

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন