জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালায় অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থবহ কানেক্টিভিটি নিশ্চিতকরণে বিটিআরসিতে কর্মশালা

জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালায় অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থবহ কানেক্টিভিটি নিশ্চিতকরণে বিটিআরসিতে কর্মশালা অনুষ্ঠিত
জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালায় অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থবহ কানেক্টিভিটি নিশ্চিতকরণে বিটিআরসিতে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু হলে মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মধ্যে পার্থক্য কমে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ন্যায় মোবাইল ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও ‘এক দেশ এক রেট’ ব্যবস্থা চালু করা হবে। বৃহস্পতিবার সকালে বিটিআরসি’র প্রধান সম্মেলন কক্ষে ‘ব্রডব্যান্ড পলিসিতে নারী, প্রতিবন্ধী, যুব, বাস্তুচ্যুত এবং অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠর জন্য অর্থবহ কানেক্টিভিটি নিশ্চিতকরণের’ লক্ষ্যে আয়োজিত ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি। সমাজের অনগ্রসর নারী, প্রতিবন্ধীর ক্ষেত্রে সুলভে ডিভাইস ও ইন্টারনেট সংযোগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণসহ নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিতে সম্মিলিতিভাবে কাজ করতে হবে।

নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট অন্যতম উপাদান উল্লেখ করে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসি’র ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো: মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে ইন্টারনেট প্রযুক্তি আসার ২৫ বছর পর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে ‘এক দেশে এক রেট‘ ট্যারিফ চালুর ফলে শহর ও গ্রামে একক মূল্যে ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছে গ্রাহক।

স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মত মোবাইল ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ‘এক দেশ এক রেট’ চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া সাশ্রয়ী স্মার্ট ডিভাইস নিশ্চিতে বিটিআরসি কাজ করছে বলেও জানান তিনি। 

A4AI এর হেড অব এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্জু মঙ্গল বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য কানেক্টিভিটি গুরুত্বপূর্ণ। ব্রডব্যান্ড পলিসিতে সকলের জন্য ইন্টারনেট সহজলভ্যতা, সাশ্রয়ী ডিভাইস ও সুলভে ইন্টারনেট সংযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত থাকলে সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য কানেক্টিভিটি প্রাপ্তি সহজ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আলোচনায় উইমেন ইন ডিজিটাল এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছিয়া নীলা বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন হয় প্রযুক্তির মাধ্যমে আর নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি মেলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। দেশের প্রান্তিক মানুষের জন্য ডিজিটাল কানেক্টিভিটির প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ডিভাইস ও ইন্টারেনেট সহজলভ্যতা, সহজে ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি প্রাপ্তি, ডিজিটাল স্বাক্ষরতা ও দক্ষতা, অবকাঠামো সুবিধা, ভাষা ও কনটেন্ট স্থানীয়করণ, সচেতনতা ও লিঙ্গ বৈষম্য।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নোভা আহমেদ বলেন, করোনাকালীন কানেক্টিভিটি মানুষের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।  প্রযুক্তির জন্য প্রশিক্ষণ তথা ডিজিটাল লিটারেসি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন,  জনগণের দোড়গোড়ায় প্রযুক্তি পৌছানোর পাশাপাশি সাশ্রয়ী স্মার্ট ডিভাইস নিশ্চিত করতে হবে।

গ্রুপ ভিত্তিক আলোচনা সঞ্চালনা করেন বিটিআরসি’র সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগে: জেনা: মো: নাসিম পারভেজ । আলোচনায় বিভিন্ন সেক্টরের অংশীজন তাদের মূল্যবান মতামত তুলে ধরেন: 

এটুআই এর ন্যাশনাল কনসালটেন্ট ভাস্কর চ্যাটার্জি বলেন, নারী ও প্রতিবন্ধীসহ দেশের প্রান্তিক মানুষের জন্য আলাদা প্যাকেজ চালুসহ যারা এখনো তথ্যপ্রযুক্তিতে সংযুক্ত নয়, তাদের জন্য কানেক্টিভিটি বৃদ্ধিতে স্মার্টফোন সহজলভ্য করতে হবে।

আইএসপিএবি প্রতিনিধি বলেন, গ্রাহকের জন্য অল্প ব্যান্ডউইডথের দীর্ঘ মেয়াদী ইন্টারনেট প্যাকেজ থাকা দরকার, তা না হলে প্রান্তিক ও কম আয়ের মানুষ ইন্টানেটে যুক্ত হতে পারবেনা। ওটিটি প্লাটফর্মের আলাদা নীতিমালা থাকার দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রিয়াদ হাসান বাদশা নামে এক অংশগ্রহণকারী বলেন, ইন্টারনেট মানেই ফেসবুক ও ইউটিউবে সীমাবদ্ধ না থাকে তা যেন অন্যান্য উৎপাদনমূলক কার্যক্রমে ব্যবহার হয় সে বিষয়ে সচেতনতা জরুরি। অনলাইন ‍জুয়া বন্ধে ভূমিকা রাখার বিষয়ে মতামত দেন তিনি।

গ্রামীণফোনের প্রতিনিধি তাজরিবা খুরশিদ বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কানেক্টিভিটি ও সাশ্রয়ী ডিভাইস নিশ্চিতসহ তরুণ ও নারীদের ডিজিটাল মার্কেটিং ও সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইশজেশন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারলে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রবি আজিয়াটা লিমিটেড এর প্রতিনিধি জেবা ফারিবা বলেন, মানসম্মত ডিভাইসের সহজলভ্যতা ইন্টারনেট গ্রাহক সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলালিংক থেকে আগত প্রতিনিধি বলেন, প্রতিবন্ধী ও নারীসহ পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর চাহিদাসমূহ তুলে ধরতে পারলে তা মোবাইল অপারেটরসমহূ সে অনুযায়ী তাদের সেবা দিতে পারবে। টেলিটকের পক্ষ থেকে শাকিলা বিশ্বাস বলেন, হাওড়-বাওড় এলাকায় টেলিটক তাদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করছে। এছাড়া সুন্দরবনে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের ফলে জেলেরা মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিধা পাচ্ছে। নারীদের জন্য টেলিটক আলাদা প্যাকেজ চালু করছে বলেও জানান তিনি।     

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উপ-সচিব (টেলিকম) খন্দকার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে  ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করা দরকার, যাতে তারা সহজে ইন্টারনেট সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। ফ্রিলান্সিং পেশায় যুক্ত গ্রাহকদের জন্য আলাদা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে প্যাকেজ চালু করা যায় কিনা সে বিষয়ে মতামত প্রদান করেন তিনি। 

বেসিসের পক্ষ থেকে রেজওয়ানা খান বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সচেতনতা খুব জরুরি। এজন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে এগিয়ে আসতে হবে। ই-ক্যাব এর পক্ষ থেকে অর্ণব মোস্তফা বলেন, আগামী ১০ বছরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট দেশের তৃণমূল পর্যায়ে যাতে ছড়িয়ে পড়ে সে লক্ষ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পৌছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান জনাব শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে কেউ যাতে বাদ না পড়ে সেজন্য সকলের মতামত নিয়ে একটি অন্তর্ভূক্তিমুলক জাতীয় ব্রডব্যান্ড পলিসি প্রণয়ন করা হচ্ছে। মিনিংফুল কানেক্টিভিটির জন্য সাশ্রয়ী ডিভাইস, সাশ্রয়ী ও মানসম্মত কানেক্টিভিটি এবং নিরাপদ ইন্টারনেটের বিষয়টি পলিসিতে অন্তর্ভূক্ত থাকতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্রডব্যান্ড পলিসিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি, নারী ও শারিরীকভাবে অক্ষম জনগোষ্ঠীসহ অনানুষ্ঠানিক খাতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, বিটিআরসি’র সচিব মো: নূরুল হাফিজসহ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, শিক্ষাবিদ, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বেসিস, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি, আইএসপিএবি এবং টেলিকম সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন