শনিবার, ১০ মে, ২০২৫, ১:৩১ অপরাহ্ণ
35 C
Dhaka

করোনা পরবর্তী শিক্ষায় আমাদের করনীয় : শাহ্‌ নেওয়াজ

করোনায় পৃথিবীর অগ্রযাত্রাকে দুটি ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। আমরা ২০১৯ এর পূর্ববর্তী পৃথিবীর সাথে আর কোন দিন করোনা পরবর্তী পৃথিবীর মিল খুজে পাবনা। এই পরিবর্তনটা হবে অস্বাভাবিক ভাবে ভিন্ন এবং মৌলিক। নতুন অনেক কিছুর জন্য প্রস্তুত হতে হবে মানব জাতীকে এর মধ্যে কিছ ু পরিবর্তন স্থায়ী হয়ে উঠবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আমাদের বিশ্বকে যেভাবে পাল্টে দিয়েছিল তেমনি করোনা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের চেয়ে ব্যাপক মাত্রায় চেনা জানা বিশ্বকে পাল্টে দিতে পারে। জার্মানির চ্যান্সেলর এঙ্গেলা ম্যার্কেল ১৮ই মার্চ দেশবাসীর উদ্দেশ্যে এক ভাষনে করোনা সংক্রমনকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে বড় সঙ্কট বলেছেন।

মানব ইতিহাসে এই প্রথমবার এমন চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে শিক্ষাক্ষেত্রে। শিক্ষার্থীদের উপর করা করোনা প্রভাব শীর্ষক ব্র্যাকের এক গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে, করোনার সময়ে প্রায় ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থীকে গৃহস্থলীর কাজ ও পরিবারকে সহযোগিতা করতে হচ্ছে। সেই সংগে ২২ শতাংশ শিক্ষার্থীর পরিবারে খাদ্য সংকট রয়েছে। অন্যদিকে যাদের পরিবারে খাদ্য সংকট ছিল না এবং কোন রকম আয় বর্ধক কাজ করতে হয়নি সেসব পরিবারের প্রায় ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী গল্প গুজব বা আড্ডাবাজি করে দিন অতিবাহিত করছে। অন্যদিকে বিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সঠিক নির্দেশনা না পাওয়ায় ৪৪ শতাংশ , পরিবার থেকে সাহায্য না পাওয়ায় ১৯ শতাংশ এবং ঘরে পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় ১১ শতাংশ শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।

ইউনেস্কো ইতিমধ্যেই সতর্ক করে বলেছে করোনা পরবর্তী বিশ্ব আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশগুলি ২০২১ সাল থেকে কাটছাট করবে তাদের শিক্ষা বাজেটে। গোটা বিশ্বেই শিক্ষার বাজেটে প্রায় ৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘাটতি দেখা দিবে।

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বৈশ্বিক মহামারি করোনার মধ্যে একদম থেমে না থাকলেও পূরোপুরি চালু করা সম্ভব হয়নি। যেহেতু শিক্ষাই জাতীর মেরুদন্ড এবং শিক্ষা ব্যবস্থার অগ্রগতি ও সাফল্যের উপরই দেশের সামগ্রিক উন্নতি নির্ভরশীল। বিকল্প পদ্ধতি হিসাবে অনলাইন ক্লাস এর কার্যকারিতা নিয়েও বিভিন্ন কারনে প্রশ্ন রয়েছে।কারন প্রায় ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারনে এই ধরনের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ গ্রহন করতে পারেনি। এদের মধ্যে গ্রমাঞ্চলের শিক্ষার্থী, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী , ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠির শিক্ষার্থী, আর্থিক ভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা রয়েছে। সুতরাং আমদের অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয় সমতা আনয়নে পুরোপুরি সক্ষম হয়নি।

সেভ দা সিলড্রেন এর একটি আলোচনায় উঠে এসেছে, করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে হয়তো স্কুলেই যাওয়া হবে না প্রায় এক কোটি শিশুর এই ভয়ঙ্কর তথ্যে আমাদের বুকটা ধুক করে কেঁপে উঠে।

এক সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সশরীরী উপস্থিতি ও চিন্তাভাবনা প্রকাশের মূল কেন্দ্র ছিল শ্রেণীকক্ষ। কিন্তু বর্তমান মহামারির ভয়াবহতায় পুরোটাই পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পূরোপূরি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর তবে অদূর ভবিষ্যতে মহামারির অবসানের পর আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নি¤েœাক্ত পরিবর্তন সমুহ সাধিত হবে। অফলাইন ও অনলাইন শিক্ষাক্রমে আমরা চলে আসবো। আমাদের পাঠ্যক্রমের ৬০ শতাংশ অনলাইনে ও বাকী ৪০ শতাংশ অফলাইনে পড়ানো হবে। বেড়ে যাবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার। ছাত্র ছাত্রীরা বাসায় বসে পড়াশুনায় অভ্যস্ত হয়ে যাবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মুখস্ত বিদ্যায় খাতায় লিখে ভাল ফলাফলের পরিবর্তে শুরু হবে প্রজেক্ট বেইজ মূল্যায়ন পদ্ধতি।যেখানে থাকবে ছাত্র ছাত্রীদের মেধা বিকাশের অফুরন্ত সুযোগ আর সাথে থাকছে দুনিয়া জুড়ে তথ্য প্রবাহের আশীর্বাদ।

করোনা পরবর্তী শিক্ষা ব্যবস্থায় পেরেনটিং এডুকেশন এর গুরুত্ব বাড়বে অথ্যাৎ বাসায় বাবা মা রা হবে ছাত্র ছাত্রীদের অন্যতম বড় প্রশিক্ষক। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলেজেন্সির ব্যবহারে শিক্ষার্থীরা হবে আন্তর্জাতিক মানের, আমাদের শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে।

করোনা পরবর্তী আমাদের করণীয় সমূহ:

* শিক্ষক প্রশিক্ষন: শিক্ষক  হলো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাণ। বর্তমান সমস্যা মোকাবেলায় তাদেরকে দক্ষ আধুনিক ডিজিটাল রিসোর্স তৈরী করার ক্ষমতা সম্ভলিত প্রশিক্ষন। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও আধুনিক এডুকেশন টুলস ব্যবহারে শিক্ষক গনের দক্ষতা বৃদ্ধি মূলক প্রশিক্ষন নিশ্চিত করতে হবে।

* কারিকুলাম পূন:সংস্করন: বর্তমানে প্রয়োজন কমিউনিটি বেইজড বা ক্রাউড সোর্স কারিকুলাম যার মাধ্যমে যার যতটুকু

প্রয়োজন ততটুকু কারিকুলামে অন্তর্ভূক্ত করবে। দক্ষতা ভিত্তিক ও মেধার বিকাশ ও সেলফ ডেভেলফমেন্ট মুলক নানা

কার্যক্রম কারিকুলামে অন্তর্ভূক্ত কনতে হবে।

* এডুকেশনাল রিসোর্স: প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যৗবস্থা গড়ে তুলতে হবে, তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরন হিসাবে

ইলেকট্রনিক ডিভাইজ প্রদান নিশ্চিত ব্যবস্থা করতে হবে। স্বল্পমূল্যে শিক্ষার্থীদেরকে ইন্টারনেট সুবিধা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

ফ্রি ইন্টারনেট প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

* মনস্তাত্তি¡ক শিক্ষা: আমাদের শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে আরও সুদৃঢ় ও আত্বপ্রত্যয়ী হওয়ার জন্য মনস্তাত্তি¡ক শিক্ষা প্রয়োজন।  সর্বপরি প্রজেক্ট বেইজ লানির্ং সিস্টেম এ শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভূক্ত করা।

* পাবলিক প্রাইভেট পার্টনার শিপ: করোনা কালীন সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্নয়। উভয়ে মিলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও আগামীকে মোকাবেলার প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে।

*মিশ্র শিক্ষার প্রবর্তন: করোনা পরবর্তী জগতে ৪০ শতাংশ পাঠ অফলাইনে গতানুগতিক পন্থায় দেওয়া হবে বাকি ৬০ শতাংশ   অনলাইন ভিত্তিক হবে। এতে একজন ছাত্রের বুদ্ধিগত বিকাশ সম্ভব। করোনা পরবর্তী পৃথিবী অনলাইন শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেবে।

* দূরশিক্ষন ব্যবস্থা: ছাত্ররা ঘরে বসেই পড়াশুনা করবে নানা অভিনব পন্থা অবলম্ভন করে। তাই ভবিষ্যতে কাজ ও পড়াশুনা  একাধারে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে এবং দূরশিক্ষনে বিপ্লব সাধিত হবে।

আমরা দেখতে পাচ্ছি আগামী দিনে ছাত্র ছাত্রীরা মুখস্ত বিদ্যার উপর ভর করে ভালো ফলাফল করতে পারবে না। ভবিষ্যতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা শিক্ষার ক্ষেত্র খুবই গুরুত্তপূর্ন হয়ে উঠবে। পরিক্ষার প্রশ্ন সমূহ বিশ্লেষনাত্ত¡ক হবে এবং ছাত্র ছাত্রীদের আরও সৃজনশীল করে তুলবে। সেজন্য আমাদের প্রয়োজন শিক্ষা বান্ধব বাজেট। বর্তমানে আমদের দেশে জিডিপির ২.২ শতাংশ বরাদ্ধ করা হয় শিক্ষায় যা অপ্রতুল। বর্তমানের শিক্ষায় এই বৈষম্য দূর করার জন্য সরকারের শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট আরো বাড়াতে হবে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে তৈরি করতে হবে এডুকেশন ফান্ডিং। এই করোনা মহামারি আমদেরকে যেভাবে সমস্যায় ফেলেছে তেমনি ভাবে উত্তোরনের অনেক সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। শিক্ষা ও অর্থ ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে জাতীয়ভাবে ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষা উপকরন নিশ্চিত করনের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করে সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। সে জন্য সবার সমন্বিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা খুবই জরুরি। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষা সং¯িøষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই আমরা সফলতা পাবো ও শিক্ষা বৈষম্য অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

লেখক ও কলামিস্ট, মোঃ  শাহ্‌ নেওয়াজ মজুমদার, ইমেইল :  mshahnewazmazumder@gmail.com

 

 

এই সপ্তাহের জনপ্রিয়

আসল এবং নকল মোবাইল ফোন চেনার সহজ ৭ টি উপায়

টেকভিশন২৪ প্রতিবেদক: বর্তমানে মোবাইল ফোন বাজারে চলছে এক তুমুল...

পাঠাও ক্যাম্পাস এলিভেশন প্রোগ্রাম ব্যাচ ২ শুরু

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: বাংলাদেশের জনপ্রিয় বৃহৎ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম পাঠাও শুরু...

এআইনির্ভর গ্রাহক সেবা চালু করেছে এয়ারবিএনবি

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: এয়ারবিএনবি অনেকটা চুপিসারেই যুক্তরাষ্ট্রে চালু করেছে তাদের...

সর্বশেষ

দেশে দক্ষতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে মোবাইল ফোন

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: মোবাইল ফোনের কল্যাণে আরও স্মার্ট জীবন যাপন...

শাওমির ১০ কোটি টাকার ঈদ ক্যাম্পেইন

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: আসন্ন ঈদ উল আযহাকে ঘিরে ১০ কোটি...

ডিআইইউতে ‘ইঞ্জিনিয়ার দিবস ২০২৫’ উদযাপিত

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: বিশ্বকে রূপদানকারী প্রকৌশলীদের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন এবং অক্লান্ত...

দেশের প্রযুক্তি বাজারে এলো ফিলিপসের সর্বাধুনিক মনিটর

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: বিশ্ববিখ্যাত ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড ফিলিপস-এর নতুন মডেলের (ইভনিয়া...

এ সম্পর্কিত

spot_img

জনপ্রিয় ক্যাটাগরি

spot_img