আইসিটি অধিদপ্তরের “বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট” উদ্বোধন ও নিবন্ধণ শুরু

টেকভিশন২৪ প্রতিবেদক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- এর জন্মশত বার্ষিকী ২০২০-২১ সালে দেশব্যাপি উদযাপিত হচ্ছে। মুজিববর্ষ আয়োজনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীনে “উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প (iDEA)” থেকে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল “বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট” সংক্ষেপে “বিগ” আয়োজন।

“বিগ” আয়োজনের মাধ্যমে তরুণ উদ্যোক্তা অর্থাৎ স্টার্টআপদের নতুন উদ্ভাবনী ধারণাকে উৎসাহিত করে দেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা এবং এই আয়োজনটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি ফ্ল্যাগশীপ প্রোগ্রাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ২০২০-২১ সালে ৩টি আয়োজন যথা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্টেকহোল্ডার অ্যাক্টিভেশন ক্যাম্পেইন, টিভি রিয়েলিটি শো এবং আন্তর্জাতিক রোড শো সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

উল্লেখ্য যে “বিগ” এর আন্তর্জাতিক রোড শো এর মাধ্যমে প্রাপ্ত স্টার্টআপদের মধ্য থেকে একটি দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিচারক প্যানেলের মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে। আমেরিকা, কম্বোডিয়া, ভারত, দক্ষিন কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, চায়না, হংকং, জাপান, ইটালি-সহ বিভিন্ন দেশকে এই “আন্তর্জাতিক রোড শো” এর মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ আয়োজনগুলো থেকে নির্বাচিত সেরা ৩৬ টি স্টার্টআপকে ১০ লক্ষ টাকা করে “গ্র্র্যান্ট” এর অর্থ প্রদান করার পাশাপাশি “বিগ” ফাইনাল রাউন্ডের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হবে । পরবর্তীতে, এই চূড়ান্ত পর্ব থেকে দেশি-বিদেশি অভিজ্ঞ বিচারকদের সমন্বয়ে গঠিত সিলেকশন প্যানেলের মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে মুজিববর্ষের বৃহৎ আয়োজনের চূড়ান্ত ফলাফল। “বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট ২০২০ (বিগ)” এর পুরস্কার হিসেবে সেরা একটি স্টার্টআপকে দেওয়া হবে বিশেষ সম্মাননা এবং গ্র্যান্ট হিসেবে ১ লক্ষ ইউএস ডলার।

২৫ নভেম্বর ২০২০ বুধবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি “বিগ” এর শুভ উদ্বোধন করেন। উক্ত আয়োজনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব পার্থপ্রতিম দেব, iDEA প্রকল্পের পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মজিবুল হক। এছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে আইসিটি পরিবারের আরো অনেকে অনলাইনে সংযুক্ত হন।

সংবাদ সম্মেলন ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী  জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর দূরদর্শীতা দিয়ে সময়ের আগে ভেবেছেন, সমস্যা সমাধানসহ অধিকার আদায়ের জন্য বড় বড় পদক্ষেপ নিয়েছেন ও অনেক বড় বড় উদ্যোগও গ্রহণ করেছেন।

আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ বিশেষ অতিথি হিসেবে বলেন, আমরা সকলেই বঙ্গবন্ধুর বিশালতার কথা জানি। এই “বিগ” এর মাধ্যমে আমরা বড় বড় কাজ করতে পারব এটা আমাদের প্রত্যাশা। তিনি তরুণদের উৎসাহিত করে বলেন যে তরুনরা চাইলেই তাদের উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে বড় প্রতিষ্ঠান গড়তে পারেন এবং হতে পারেন “বিগ”।

অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) পার্থপ্রতিম দেব স্টার্টআপের উদ্ভাবিত তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর উদ্ভাবনী পণ্যের বিশ্ববাজারে পরিচিতির লক্ষ্যে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ” পণ্যের প্রচার-প্রসারের কৌশল হিসেবে উন্নত বিশ্বের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের সাথে বাংলাদেশের স্টার্টআপদেরকে পরিচিত করে দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানান। বাংলাদেশের স্টার্টআপ সংস্কৃতি বিকাশের উদ্দেশ্যে প্রকল্প হতে “বিগ” আয়োজন একটি বিশাল ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি আশাব্যাক্ত করেন।

অনুষ্ঠানটিতে iDEA প্রকল্পের পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মজিবুল হক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং নানা স্মৃতি তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি iDEA প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রম ও সফলতা সম্পর্কে বর্ননা করেন। দেশীয় উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তাগণকে নিজেদের মেধা ও সৃজনশীলতার সমন্বয়ে বিভিন্ন উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাস্তব জীবনের নানা সমস্যা সমাধানে উৎসাহিত করতে “বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট ২০২০” আয়োজনের গুরুত্ব তিনি সকলের মাঝে তুলে ধরেন এবং “বিগ” এর সাথে সংযুক্ত হবার জন্য সকল পার্টনারদেরও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

প্রাথমিকভাবে ২৫ নভেম্বর ২০২০ তারিখ থেকে “বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট ২০২০” এ তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক আগ্রহী স্টার্টআপগণ www.big.gov.bd এই ওয়েবসাইটে নিবন্ধণ করতে পারবেন। জাতীয় পর্যায়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ২৫ জানুয়ারি ২০২১ তারিখের মধ্যে যে কোন তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক উদ্যোক্তা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন।

প্রচারণাসহ দেশের ৮টি বিভাগেই অনলাইনে এবং করোণা পরিস্থিতির কারণে যথাযথ সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফলাইনে অ্যাকটিভেশন ক্যাম্পেইন আয়োজন করা হবে। একইসাথে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রচার-প্রচারণা চলমান থাকবে।

এ আয়োজনে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, কন্ট্রোলার অব সার্টিফায়িং অথরিটিজ (সিসিএ), এটুআই, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড-কে এ ইভেন্টের পার্টনার হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়াও, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন যথা বেসিস, বাক্য, বিসিএস, ইক্যাব, আইএসপিএবি, বিআইজেএফ -কে উক্ত ইভেন্টের পার্টনার হিসেবে সংযুক্ত আছে। বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উদ্ভাবক, প্রফেশনাল, স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন দেশের হাই-কমিশন ও এম্বাসী, স্টার্টআপের সাথে সংশ্লিস্ট বিভিন্ন দেশি-বিদেশী কমিউনিটি ও ক্লাব, ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনসহ শতাধিক প্রতিনিধিরা এই আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন। সর্বশেষ বলা যায়, এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে আইসিটি ক্ষেত্রে নতুনভাবে উপস্থাপিত হবে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে আগামী মার্চ ২০২১-এ যথাযথ সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র “প্রধান অতিথি” হিসেবে সদয় উপস্থিতির মাধ্যমে “বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট ২০২০” এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

একইসাথে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ এর সদয় উপস্থিতিও এই অনুষ্ঠানে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। স্ব-শরীরে অথবা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে মাননীয় অতিথিদের উপস্থিতির মাধ্যমে অনুষ্ঠানটিকে তরুণ উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তাগণকে আরো প্রাণোজ্জ্বল, ফলপ্রসু ও অর্থবহ করে তোলা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, “বিগ” আয়োজনটিকে পরবর্তী বছরগুলোতেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক ধারাবাহিকভাবে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন