টেকভিশন২৪ ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: বিকাশের প্রায় ১৭ বছর পর ভার্জিন গ্যালাকটিকে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে বৃটিশ ব্যবসায়ী স্যার রিচার্ড ব্রানসন তার স্বপ্ন পুরনে স্পেসে পৌঁছেছিলেন।
মহাকাশযানের কেবিন থেকে ব্রানসন এই স্পেস যাত্রাকে “একটি আজীবনের সম্পুর্ন অভিজ্ঞতা” বলে আখ্যায়িত করেন। ব্রানসন অবতরণের পর বলেন, “আমি ছোটবেলা থেকে এই মুহুর্তটির স্বপ্ন দেখছি এবং সত্যি বলতে কোন কিছুই আপনাকে প্রস্তুত করতে পারে না পৃথিবী থেকে মহাকাশ দেখার জন্য। ”
রবিবার (১১ জুলাই) মহাকাশযানের ভিএসএস ইউনিটি নিউ মেক্সিকোর আকাশে যাত্রা করছিলো এসময় ওই যানে ছিলো দুজন পাইলট, ব্রানসন ও তিনজন ভার্জিন গ্যালাকটিকের কর্মচারী।
ভিএসএস ইউনিটি ৪০,০০০ ফিটের উপরে ভিএমএস ইভ নামক একটি ক্যারিয়ারে বিমানটি ছেড়ে দেওয়ার পর রকেট ইঞ্জিন নিক্ষেপ করে।স্পেসের প্রান্তে যাবার সময় শব্দের গতির থেকে তিনগুন বেশি গতি থাকে যানটিতে।
ভার্জিন গ্যালাকটিকের ক্রুরা যখন ওজন শূণ্য হয়ে ভাসছিলো তখন ভিএসএস ইউনিটি মাইক্রোগ্রাভিটিতে ধীরে ব্যাকফ্লিপ করে।
মহাকাশযানটি ৮৬.১কিমি (৫৩.৫ মাইল বা ২৮২০০০ফিট) উচ্চতায় পৌঁছেছিলো। এরপর যানটি বায়ুমন্ডলের মধ্যে থেকে আমেরিকান রানওয়েতে ফিরে আসে, যেখন থেকে যাত্রা শুরু করেছিলো।
এই মহাকাশযানের পাইলট ছিলেন ডেভ ম্যাকে ও মাইকেল মাসুচি। মহাকাশযানে ব্রানসানের সাথে আরো ছিলেন প্রধান নভোচারী প্রশিক্ষক বেথ মুসা, মুল অপারেশন ইঞ্জিনিয়ার কলিন বেনেট, এবং সরকারী বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট সিরিশা বান্দালা।
ম্যাকে ও মাসুচি দুজনেই এর আগে মহাকাশে উড়েছিলেন, পাশাপাশি মুসা ও পাইলট সি.জি স্টারকো এবং মার্ক স্টকিও ছিলেন তাদের সাথে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে সকল পাইলটরা ৮০ কিমি এর বেশি (প্রায় ২২২০০০ ফুট) উচ্চতায় উড়ে তাদের আনুষ্ঠানিক ভাবে নভোচারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ভিএসএস ইউনিটিকে ছয়জন যাত্রী ও দুইজন পাইলটের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই কোম্পানির বিমানের টিকিটের জন্য ৬০০ টি রিজার্ভেশন করা আছে, যার মূল্য ২০০০০০ থেকে ২৫০০০০ ডলার পর্যন্ত।
ব্রানসন তার যাত্রার পর বলেছিলেন, ” আমরা এখানে সবার জন্য স্পেসকে সুলভ করতে এসেছি।”
তিনি আরো বলেন, ” আমি আমার স্পেসসুটের ভিতরে যে বিবৃতিটি লিখেছিলাম মহাকাশ ভ্রমণের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা এটি আমার নাতি নাতনিদের জন্য এবং আজ যারা বেঁচে আছেন তাদের জন্য, সবার জন্য।”
স্পেসফ্লাইটের লক্ষ্যগুলি
ভার্জিন গ্যালাকটিকের এখন পর্যন্ত এটি চতুর্থ স্পেসফ্লাইট ছিলো, এটি এ বছরের দ্বিতীয় ও একাধিক যাত্রী বহনকারী হিসেবে প্রথম।
ব্রানসনকে উড়ানোর পাশাপাশি স্পেসফ্লাইটের আরো লক্ষ্য রয়েছে, ভার্জিন গ্যালাকটিক ২০২২ সালের প্রথম দিকে বাণিজ্যিক যাত্রা শুরুর লক্ষ্যে তার স্পেসক্রাফট সিস্টেমটি পরীক্ষা করে দেখছে। গ্রাহকদের অভিজ্ঞতার জন্য চারজন ক্রুয়ের টিম মহাকাশযানের কেবিনটি পরীক্ষা করছেন এবং ভার্জিন গ্যালাকটিককে যথাযথ ভাবে উন্নত করা হচ্ছে।
উপরন্তু, সিরিশা বান্দালা একটি গবেষণার উপর পরীক্ষা করবে যেমনটা তিনি ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ে টেস্ট টিউবে গাছপালা নিয়ে করছেন।
সবার জন্য সুইপস্টেক
স্পেসফ্লাইটটি অবতরণ করার পর ব্রানসন ঘোষণা করেছিলেন যে, ভার্জিন গ্যালাকটিক সুইপস্টেকস কোম্পানি ওমাজের সাথে অংশীদারিত্ব করেছেন এবং পরের বছরের প্রথম বাণিজ্যিক স্পেসফ্লাইটগুলির মধ্যে একটিতে দুটি আসনের সুযোগ দিবেন। ব্রানসন বলেছিলেন, “আপনার মহাকাশে যাওয়ার সুযোগ আছে।”
সুইপস্টেক “স্পেস ফর হিউম্যানিটি” নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুদান চেয়েছিলেন।
স্পেসপোর্ট আমেরিকার বিজয়ীদের ব্রানসন তার উইলি ওনকা হ্যাট দিবেন বলেছেন। ব্রানসন বলেছিলেন, “এটি একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে যাদের স্পেসে যাওয়ার সার্মথ্য নেই তারা যেতে পারবে।”
ব্রানসনের ভ্রমণ
অ্যাপোলো চাঁদে অবতরণ দেখার পর থেকে ব্রানসন মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং ২০০৪ বেসরকারি ভাবে ভার্জিন গ্যালাকটিক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ডিজাইনার বার্ট রুটানের দ্বারা নির্মিত স্পেসক্রাফট কিনে তিনি কোম্পানির যাত্রা শুরু করেন।
এই স্পেসসিপ ওয়ান যানটি দু’সপ্তাহের মধ্যে দুবার উড়ানোর জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার পায়।
ব্রানসনের সাথে স্কেলড কম্পোজিটর গুলোর চুক্তির পর ভার্জিন গ্যালাকটিক এর স্পেসসিপ টু এসেছিলো। ২০০৭ সালে রকেট ইঞ্জিন বিস্ফোরণে স্কেলড কম্পোজিটরের ৩জন কর্মী মারা যায় এবং ২০১৪ সাথে প্রথম স্পেসসিপ টু ধাক্কা লাগার কারণে ভার্জিন গ্যালাকটিকের সহ-পাইলট মাইকেল আলসবারি নিহত এবং পাইলট পিটার সাইবোল্ড আহত হয়েছিলো।
এরপর কোম্পানি ভবিষ্যতের দূর্ঘটনা রোধ করতে অতিরিক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা সহ ডিজাইন করে ভিএসএস ইউনিটি। ভার্জিন গ্যালাকটিক ২০১৬ সালে ইউনিটির পরীক্ষা শুরু করে এবং ডিসেম্বর ২০১৮ তে প্রথমবারের মত স্থানটিতে পৌঁছেছিলো। উপরন্তু ভার্জিন গ্যালাকটিক এ বছরের শুরুর দিকে পরবর্তী মহাকাশযানে নতুন কিছু সংযোজন এনেছে, ভিএসএস ধারণা করছে এগুলো পরবর্তী প্রজন্মের তৃতীয় শ্রেণির যানের মধ্যে প্রথম।
গত মাসে কোম্পানিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় ফেডারাল এভিয়েশন থেকে যাত্রীদের স্পেসফ্লাইটে উড়ানোর জন্য একটি সনদ গ্রহন করেন। সংস্থাটি এফএএর জন্য ২৯টি উপাদান যাচাইকরণ ও বৈধকরণ প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেছে, মে মাসে সাম্প্রতিক স্পেসফ্লাইট পরীক্ষা দিয়ে চূড়ান্ত দুটি মাইলফলক অর্জন করে।
ব্রানসনকে রবিবারের স্পেসফ্লাইটে উড়ানোর কথা ছিলো না কারণ ভার্জিন গ্যালাকটিক দ্বিতীয় থেকে শেষ ফ্লাইটে প্রতিষ্ঠাতাকে উড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলো । কিন্তু কোটিপতি সহকর্মী জেফ বেজোস ২০ জুলাই তার সংস্থা ব্লু অরিজিন থেকে ফ্লাইটের ঘোষণা দিলে ভার্জিন গ্যালাকটিক সময়সুচির পরিবর্তন করেন বেজোসের যাত্রার ৯দিন আগে ব্রানসনকে উড়ানোর জন্য।
বেজোস বা এলন মাস্কের আগে যাত্রা করে ব্রানসন বুঝিয়ে দেন তার কোম্পানি মহাকাশযান চালানোর স্পেস কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে প্রথম।
ভার্জিন গ্যালাকটিক এবং ব্লু অরিজিন মহাকাশ পর্যটন অঞ্চলে প্রতিযোগিতা করছে, উভয় সংস্থার যান যাত্রীদের কয়েক মিনিটের জন্য মহাকাশের প্রান্তে নিয়ে গেছে। একটি কক্ষপথে বিমান কয়েক মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে এবং একাধিক দিন বা সপ্তাহ স্পেসে ব্যয় করে।
ব্রানসনের সংস্থা বিশ্বাস করে যে, ২৫০০০০ থেকে ৫০০০০০ ডলার দামের স্পেসফ্লাইটে ২ মিলিয়ন লোক বহন করার বাজার রয়েছে এবং বাজারের প্রসার ঘটছে ব্যয় হ্রাস পাবে।