মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৭:১৯ পূর্বাহ্ণ
20 C
Dhaka

ফুডপান্ডার ভ্যাট ফাঁকি

প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন ও বাড়ি ভাড়ায় ভ্যাট ফাঁকি তিন কোটি ৪০ লাখ, করে খাবার সরবরাহ, ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে তথ্য প্রযুক্তি সেবায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাড়ি ভাড়ার উপর ভ্যাট দেয়নি ফুডপান্ডা। 

- Advertisement -

টিভি২৪ ডেস্ক: দেশের বৃহৎ অনলাইন খাবার অর্ডার নেয়া প্রতিষ্ঠান ফুডপান্ডা। দেশের প্রায় পাঁচ হাজার ফুড স্টোর থেকে ফুড সংগ্রহ করে ভোক্তার নিকট বাইকারদের মাধ্যমে সরবরাহ করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে ফুডপান্ডার চুক্তি রয়েছে, যার আওতায় ফুডপান্ডা কমিশন পায়। বহুজাতিক এ ফুড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে আসছে। এছাড়া তথ্য ও প্রযুক্তি সেবা দেখিয়ে ভ্যাট নিবন্ধন নিয়ে বাড়ি ভাড়ার বিপরীতে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে। প্রায় তিন ৪০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন ও মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা। বুধবার (২৮ অক্টোবর) এ মামলা করা হয়। ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এনবিআর সূত্র জানায়, ফুডপান্ডা হলো অনলাইনে খাবার অর্ডার করার একধরনের ব্র্যান্ড বা কোম্পানি। এটির প্রধান সদরদপ্তর জার্মানির বার্লিন শহরে অবস্থিত। বর্তমানে ফুডপান্ডা বাংলাদেশসহ ১১টি দেশে অনলাইনে খাবারের অর্ডার গ্রহণ ও ডেলিভারির কাজ করে থাকে। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো হলো-বুলগেরিয়া, কম্বোডিয়া, হংকং, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, পাকিস্তান, রোমানিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও জাপান। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জার্মানির ডেলিভারি হিরো নামক প্রতিষ্ঠানটি ফুডপান্ডা গ্রুপকে কিনে নেয়। বর্তমানে এটি তাদের দ্বারাই পরিচালিত হয়ে থাকে।

ড. মইনুল খান জানান, ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে বিক্রয় তথ্য গোপন ও বাড়ি ভাড়ার বিপরীতে ভ্যাট ফাঁকির সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ পায় এনবিআর। এরই প্রেক্ষিতে এনবিআরের নির্দেশে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় ভ্যাট গোয়েন্দা। ভ্যাট গোয়েন্দার উপপরিচালক নাজমুন্নাহার কায়সার ও সহকারী পরিচালক মো. মহিউদ্দীন এর নেতৃত্বে দল গঠন করা হয়। ১৫ অক্টোবর ভ্যাট গোয়েন্দা দল ফুডপান্ডা বাংলাদেশ লিমিটেড (নাভানা প্রিস্টিন প্যাভিলিয়ন, প্লট-১২৮, ব্লক-সিইন, নবম তলা) অভিযান পরিচালনা করেন।

তিনি আরও জানান, ভ্যাট গোয়েন্দা দল অভিযানের সময় ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পায়। প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত নথিপত্র দেখাতে অনুরোধ করা হলে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ভ্যাট সংক্রান্ত নথিপত্র প্রদর্শন করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানে ব্যবহূত কম্পিউটার ও কর্মকর্তাদের ল্যাপটপ তল্লাশি করে প্রতিষ্ঠানের মাসিক বিক্রয়ের কিছু গোপন তথ্য পাওয়া যায়। গোয়েন্দারা সেই বিক্রয় তথ্যসহ আরো কিছু বাণিজ্যিক দলিলাদি জব্দ করেন।

এসব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি তথ্য প্রযুক্তি সেবার (সেবার কোড এস-০৯৯.১০) আওতায় নিবন্ধন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটি মূলত ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক (অনলাইন প্লাটফর্ম) ব্যবহার করে পণ্য বিক্রয় করে থাকে। যার প্রকৃত সেবার কোড এস-০৯৯.৬০। এই কোডের আওতায় ভ্যাট ৫ শতাংশ এবং বাড়ি ভাড়ার উপর উৎসে ভ্যাট ১৫ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটি তথ্য প্রযুক্তি সেবা কোডে নিবন্ধন নিয়ে বাড়ি ভাড়ার উপর ভ্যাট পরিশোধ করে না। এই কোডটি কোনক্রমেই তাদের ব্যবসার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়া সত্ত্বেও বাড়ি ভাড়ার উপর অবৈধভাবে শূন্য হারে ভ্যাট সুবিধা নেয়ার উদ্দেশ্যে তা ব্যবহার করে আসছে।

মহাপরিচালক জানান, প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার ও ল্যাপটপ থেকে জব্দ করা তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি ও এপ্রিল-মোট আট মাসে মোট ২৭ কোটি ৫৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৭ টাকার বিক্রয় তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি গুলশান ভ্যাট সার্কেলে দাখিলপত্রে ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ৯৭২ টাকা বিক্রয়মূল্য দেখিয়েছে। আট মাসে প্রতিষ্ঠানটি মোট ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৪৫ টাকা বিক্রয়তথ্য গোপন করেছে। যার উপর পরিহার করা ভ্যাট ৫৩ লাখ ১০ হাজার ৭৪ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ৯ লাখ ৬৫ হাজার ৬২০ টাকা।

তিনি আরও জানান, প্রতিষ্ঠানটি সেবার কোড এস-০৯৯.১০ এর আওতায় অসঙ্গতিপূর্ণ নিবন্ধন নেয়ায় প্রতিষ্ঠার পর থেকে তারা এ পর্যন্ত বাড়ি ভাড়ার উপর কোন ভ্যাট পরিশোধ করেনি। প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ হতে ২০১৮ পর্যন্ত সময়ে বাড়ি ভাড়া বাবদ দুই কোটি ৫০ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯৯ টাকা প্রদর্শন করা হয়েছে। যার উপর প্রযোজ্য ভ্যাট ২৯ লাখ ৬ হাজার ২৬ টাকা।

এছাড়া ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সময়ের জব্দকৃত ভাড়ার চুক্তি মোতাবেক বাড়ি ভাড়া বাবদ এক কোটি ৮৪ লাখ টাকা প্রদর্শন করা হয়েছে। যার উপর প্রযোজ্য ভ্যাট ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অর্থাৎ বাড়ি ভাড়ার উপর ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে মোট ৫৬ লাখ ৬৬ হাজার ২৬ টাকা। যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী এর উপর মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৯২০ টাকা।

দাখিলপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি লিমিটেড কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও পণ্য ক্রয়ের উপর কোন উৎসে ভ্যাট পরিশোধ করেনি। বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৪ হতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত উৎসে ভ্যাট হিসেবে এক কোটি ২৪ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৩ টাকা পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে। এর উপর ২ শতাংশ হারে সুদ ৭২ লাখ ১২ হাজার ৭১৯ টাকা।

ফুডপান্ডা খাবার বিক্রয়ের বিপরীতে ৫৩ লাখ ১০ হাজার ৭৪ টাকা, বাড়ি ভাড়ার বিপরীতে ৫৬ লাখ ৬৬ হাজার ২৬ টাকা এবং উৎসে কর্তন বাবদ এক ২৪ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৩ টাকাসহ মোট দুই কোটি ৩৪ লাখ ১১ হাজার ৬৫৩ টাকা ভ্যাট পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে। এই ভ্যাটের উপর সুদ এক কোটি ৫ লাখ ৪০ হাজার ২৬০ টাকা। সুদসহ সর্বমোট তিন কোটি ৪০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠানো হবে। তথ্যসূত্র: শেয়ার বিজ। 

এই সপ্তাহের জনপ্রিয়

ঢাকায় নতুন কম্পিউটার মার্কেট উদ্বোধন

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোড গড়ে উঠছে প্রযুক্তিপণ্যের...

প্রথম প্রান্তিকে ওয়ালটনের প্রবৃদ্ধি ৪৮ শতাংশ

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষিতে...

আসল এবং নকল মোবাইল ফোন চেনার সহজ ৭ টি উপায়

টেকভিশন২৪ প্রতিবেদক: বর্তমানে মোবাইল ফোন বাজারে চলছে এক তুমুল...

সর্বশেষ

অ্যাপল ছাড়ছেন সিইও টিম কুক

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: অ্যাপলে সাম্প্রতিক বেশ কিছু বড় পরিবর্তনের পর...

‘জিপি শিল্ড’ চালু করলো গ্রামীণফোন

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: গ্রাহকদের ম্যালওয়্যার, র‍্যানসমওয়্যার এবং ফিশিং আক্রমণসহ ক্রমবর্ধমান...

দক্ষিণ-দক্ষিণ সেমিকন্ডাক্টর সেতুবন্ধন গড়ে তুলছে বাংলাদেশ

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: বাংলাদেশ সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআইএ) পেনাং-এ তিন...

বেসিস স্টুডেন্টস ফোরামের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস...

এ সম্পর্কিত

spot_img

জনপ্রিয় ক্যাটাগরি

spot_img