রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫, ৩:৫৫ পূর্বাহ্ণ
28 C
Dhaka

ইভিএম সংরক্ষণে অঞ্চল ভিত্তিক ওয়্যারহাউজ

সচল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে অঞ্চল ভিত্তিক ওয়্যারহাউজ নির্মাণে জমি খুঁজছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য বিভাগীয় কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের দারস্থ হওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

- Advertisement -

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যথায় হাতে থাকা সচল মেশিনগুলোও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাবে।

সভায় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, সংরক্ষিত ইভিএমসমূহ যাচাই করে দেখা যায় যে, ইভিএমসমূহের মধ্যে অনেক ইভিএম ব্যবহার অনুপযোগী অবস্থায় আছে, এ সকল ইভিএম যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে বিনষ্ট করা প্রয়োজন। এছাড়া ১০টি অঞ্চলে ইভিএম সংরক্ষণের জন্য ওয়্যারহাউজ তৈরি করা প্রয়োজন। এজন্য ওয়্যারহাউজের একটি খসড়া ডিজাইন প্রকল্প কার্যালয় হতে মাঠ পর্যায়ে দেওয়া প্রয়োজন। ওয়্যারহাউজ তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জমি এবং অন্যান্য খরচের দরকার হবে। এজন্য ইভিএম প্রকল্প এবং মাঠ কার্যালয়ের সমন্বয়ে একটি ব্যয় প্রাক্কলন প্রস্তুতপূর্বক কমিশন সচিবালয়ের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করতে হবে।  

এক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও জেলা পর্যায়ে ওয়্যারহাউজ নির্মাণে জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকদেরকে পত্র প্রেরণ করা প্রয়োজন। এর আগে কেন্দ্রীয়ভাবে ওয়্যারহাউজের একটি ডিজাইন প্রস্তুতপূর্বক মাঠ পর্যায়ে প্রেরণ করতে হবে।

ইসি সচিব শফিউল আজিম ওই সভার পর ইভিএমের প্রকল্প পরিচালক, সাধারণ সেবা শাখার উপসচিব ও উপ প্রধানকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

এর আগে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিভিন্ন নির্বাচনের ব্যবহৃত ইভিএম সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পড়ে থাকায় নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে বলে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সতর্ক করেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা।

তারা বলেন, বর্তমানে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইভিএম সংরক্ষিত আছে এবং কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের নিচ তলায় স্যাঁত স্যাঁতে অবস্থায় আছে। এতে ইভিএমগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইভিএম সংরক্ষিত থাকায় সে সকল প্রতিষ্ঠানে পাঠদানেও অসুবিধা হচ্ছে। এই অবস্থায় ১০টি অঞ্চলে ইভিএম সংরক্ষণের জন্য ওয়ারহাউজ তৈরি করার প্রতি জোর দেন তারা।

নির্বাচন কমিশনের প্রশাসনিক ১০টি অঞ্চল তথা ঢাকা, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহীর মধ্যে সম্প্রতি ঢাকায় একটি ওয়্যার হাউজের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে উন্নতমানে এই ভোট যন্ত্রগুলোর সুরক্ষায় ইসির কোনো সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেই।

ইসি সচিব শফিউল আজিম এ নিয়ে বলছেন, ইতোমধ্যে তারা ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে একটি ওয়্যারহাউজ তৈরির জন্য জমি চাওয়া হয়েছে। জমি পেলে ইভিএম সংরক্ষণসহ সার্বিক ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

জানা গেছে, এক-এগার সরকারের সময়কার ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন দেশের ভোট ব্যবস্থায় ইভিএমের ব্যবহার শুরু করে। সে সময় তারা বুয়েট থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে মেশিন তৈরি করে নেয়। ওই কমিশনের ধারাবাহিকতায় পরে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও ভোট যন্ত্রটি ব্যবহার করে। তবে ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি মেশিন অচল হয়ে পড়ায় তা আর ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি রকিব কমিশন। পরে তারা বুয়েটের তৈরি স্বল্প মূলের ওই মেশিনগুলো পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় ও উন্নত মানের ইভিএম তৈরির পরিকল্পনা রেখে যায়।

২০১৭ সালে কেএম নূরুল হুদার কমিশন এসে বুয়েটের তৈরি ইভিএমের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক পূর্বে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নেন তারা। এতে মেশিন প্রতি ব্যয় হয় দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকার মতো। হাতে নেওয়া হয় তিন হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প।

সেই প্রকল্প থেকে দেড় লাখ ইভিএম কেনে রকিব কমিশন। প্রকল্পের সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের ব্যবস্থা না থাকায় সেই উন্নত মানে ইভিএম মেয়াদ ১০ বছর হলেও পাঁচ বছর যেতে না যেতেই অকেজো হতে শুরু করে। কন্ট্রোল ও ব্যালট ইউনিট মিলে একটি সেট, যা একটি ইভিএম হিসেবে ধরা হয়।

কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৩ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এসে প্রায় প্রতিটি সেটেই কোনো না কোনো সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় ৪০ হাজারের মতো মেশিন ব্যবহার অনুপযোগী যায়। অবশিষ্ট এক লাখ ১০ হাজার মেশিনের মধ্যে অধিকাংশগুলোতে ধরা পড়ে নানা ধরনের ত্রুটি। কিন্তু মেরামতের জন্য ছিল না নতুন কোনো অর্থের যোগান। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকার ইভিএম অচল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। অকেজো মেশিন মেরামত, সংরক্ষণ প্রভৃতির জন্য সাড়ে ১২শ কোটি টাকার প্রস্তাব দিলে বৈশ্বিক অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে সরকার সেটি নাকচ করে দেয়। বর্তমানে অকেজো ইভিএমের সংখ্যা আরো বেড়েছে।

ইভিএম প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, বর্তমানে এক লাখ ১০ হাজার মেশিন ব্যবহার অনুপযোগী। আর ৪০ হাজারের মতো মেশিন নির্বাচনে ব্যবহার করা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আসল কথা হলো দক্ষ লোকবলের অভাব। আমাদের প্রকল্প থাকলেও সেখানে দক্ষ কারিগরি লোকবল নেই। যারা ছোটখাটো সমস্যা হলে সমাধান করতে পারে। আগেও যে ইভিএম ছিল তখনো কারিগরি লোকবল নিয়ে ভাবনা হয়নি। এখনো নেই। এছাড়া সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি প্রকল্পে।

বাংলানিউজ অবলম্বনে

এই সপ্তাহের জনপ্রিয়

ঢাকায় বিআইটিপিএফসি’র নলেজ শেয়ারিং প্রোগ্রাম সম্পন্ন

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: বাংলাদেশ আইটি প্রফেশনালের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ...

আসল এবং নকল মোবাইল ফোন চেনার সহজ ৭ টি উপায়

টেকভিশন২৪ প্রতিবেদক: বর্তমানে মোবাইল ফোন বাজারে চলছে এক তুমুল...

টাঙ্গাইল ও কালিয়াকৈরে বন্ডস্টাইনের জিপিএস ট্র্যাকার ডিলার পয়েন্ট চালু

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: ‘আপনার গাড়ির নিরাপত্তা এখন হাতের মুঠোয়’ স্লোগানে...

সর্বশেষ

ই-বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনায় জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান: জহিরুল ইসলাম

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: "রিসাইকেল ইউর ই-ওয়েস্ট, ইট'স ক্রিটিক্যাল" এই গুরুত্বপূর্ণ...

ফের সম্প্রচারে ফিরছে গ্রিন টিভি

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: শিগগির সম্প্রচারে ফিরছে গ্রিন মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের (গ্রিন...

দেশে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৫ এফই উন্মোচন

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: দেশের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যালাক্সি এস২৫ এফই উন্মোচন...

১৫ সিরিজের ফাইভজি ‘এআই পার্টি ফোন’ আনল রিয়েলমি

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: বাংলাদেশে বহুল প্রতীক্ষিত রিয়েলমি ১৫ সিরিজ উন্মোচনের...

এ সম্পর্কিত

spot_img

জনপ্রিয় ক্যাটাগরি

spot_img