রোবোটিক্স না শিখালে আমরা উন্নত বিশ্ব থেকে পিছিয়ে যাবো : আইসিটি প্রতিমন্ত্রী

অনলাইনেই শুরু হল ৪র্থ বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড, এই আয়োজনে অংশগ্রহনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে রোবোটিক্স না শিখালে আমরা উন্নত বিশ্ব থেকে পিছিয়ে যাবো : আইসিটি প্রতিমন্ত্রী

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলের ধারাবাহিক সাফল্যের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদেরকে রোবটিক্সের প্রতি আগ্রহী করে তোলা ও রোবট পরিচালনায় তাদের দক্ষতা যাচাই করার জন্য দেশে চতুর্থবারের মত অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড ২০২১ (বিডিআরও২০২১)। কোভিড-১৯-এর বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতাটি গত বছরের ন্যায় এবারও আয়োজিত হচ্ছে অনলাইনে। অনলাইনেই আগামী ১৭-২৫ সেপ্টেম্বর ৪র্থ বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড আয়োজিত হবে।

আজ ১৬ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার অনলাইনে বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড ২০২১-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক,এমপি।৪র্থ বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড-২০২১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন,‘’বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড একটি গৌরবজ্জল বিষয় হয়েছে দেশের জন্য।” আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে প্রথমবার অংশ নিয়েই স্বর্ণপদক অর্জন এরপর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ আরও বেড়ে যাওয়া দেশের জন্য অনেক সম্মানের বলে জানান মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ।

আজ অনলাইনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স এন্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওসএনের)যৌথ আয়োজনে ৪র্থ বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করা হয়।অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ড.মো.আখতারুজ্জামান।

প্রধান অতিথীর বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন,মানুষের দৈনন্দিন জীবনে রোবটের চাহিদা বাড়ছে। ইন্টারনেট অব থিংস,হার্ডওয়ার,আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার সবখানেই বেড়ে গেছে। রোবটের এই বিষয়গুলো ভালভাবে শিখে শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মজীবনে প্রবেশ করলে অনেক বিষয়ের দক্ষতার প্রমাণ দিতে পারবে। প্রতিমন্ত্রী আরো জানান, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাব স্থাপনের চিন্তা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২ থেকে ৮ কোটি মানুষকে যাতে প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করা যায় সে ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।এ কাজে আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে। রোবটিক্সকে শিক্ষার্থীদের আরো কাছে নিয়ে যেতে বা হাতে কলমে রোবট নিয়ে দক্ষতা বাড়াতে দেশের ৩শটি স্থানে ’স্কুল অব ফিউচার’ ল্যাব তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ।

অলিম্পিয়াড উদ্বোধন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ড.মো.আখতারুজ্জামান বলেন, “২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা প্রতিবছর কয়েকগুন সংখ্যক অংশগ্রহণকারীকে সংযুক্ত করছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটি প্রবল আশার সঞ্চার করে এবং একই সাথে আমাদের আয়োজকদের অনুপ্রাণিত করে। এই আয়োজনের সাথে থাকতে পেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গর্বিত।”

বিশেষ অতিথীর বক্তব্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড.মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন,‘সারা পৃথিবীতে রোবটের নানারকম ব্যবহার নিয়ে হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে। এই অলিম্পিয়াডে আসার ফলে অংশগ্রহণকারীরা তাদের সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে।’ এর পাশাপাশি তিনি এই আয়োজনে যারা নেতৃত্বে দিচ্ছে তাদের ধন্যবাদ জানান এবং সবসময় সহযোগিতা করার জন্য আইসিটি মন্ত্রণালয়কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ড.মোঃ আব্দুল মান্নান,পিএএ বলেন,’প্রতি বছর রোবট অলিম্পিয়াডের অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর এই আয়োজন কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে হতে যাচ্ছে।” এছাড়া তিনি বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের প্রতিযোগীদের জন্য আইডিয়ার ফ্লোর ব্যাবহার করতে দেয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করার কথাও ঘোষণা করেন। সমগ্র ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স এন্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল।

স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সাধারন সম্পাদক মুনির হাসান। স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশে রোবট অলিম্পিয়াড শুরুর কথা মনে করার পাশাপাশি স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং ভাষাকে বাংলায় অনুবাদে বিডিওএসএনের কর্মযজ্ঞের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স এন্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড.শামীম আহমেদ দেওয়ান।

এবছর জাতীয় পর্বের জন্য দেশের ৬৪টি জেলা থেকে ১১২৪ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছে। জাতীয় পর্বে বিজয়ীদের মধ্য থেকে পরবর্তীতে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ এবং ওয়ার্কশপের মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরাই আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। এ বছর রোবট অলিম্পিয়াডে ক্রিয়েটিভ ক্যাটেগরি, রোবট ইন মুভি, রোবট গ্যাদারিং, রোবটিক কুইজ এবং রোবটিক্স কুইক কুইজ এই মোট পাঁচটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।এর মধ্যে কুইজ প্রতিযোগিতাগুলো বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের জন্য আয়োজিত হবে এবং অন্য তিনটি প্রতিযোগিতা দক্ষিণ কোরিয়ার দ্যেগু শহরে অনুষ্ঠিতব্য ২৩তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের দল গঠনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক পর্বের নিয়ম অনুসারে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি প্রতিযোগিতায় জুনিয়র এবং চ্যালেঞ্জ – এই দুইটি ক্যাটাগরিতে অনুষ্ঠিত হবে। যাদের বয়স ৭-১২ বছরের মধ্যে তারা জুনিয়র গ্রুপে এবং যাদের বয়স ১৩-১৮ বছরের মধ্যে তারা চ্যালেঞ্জ গ্রুপে প্রতিযোগিতা করবে।

উল্লেখ্য,২০১৭ সালে চায়নার বেইজিং এ অনুষ্ঠিত ১৯তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে পর্যবেক্ষক হিসেবে বাংলাদেশ সর্বপ্রথম অংশগ্রহণ করে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর উৎসাহেই সেই আসরে অংশগ্রহণের জন্য আইআরওসি-র হেডকোয়ার্টার দক্ষিণ কোরিয়াতে প্রথম যোগাযোগ করেন বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) এর সাধারণ সম্পাদক। সেই আসরেই সদস্যপদের জন্য সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে বাংলাদেশকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় আইআরওসি।

এর পরের বছর ২০১৮ সালে দেশে আয়োজিত হয় প্রথম বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড। জাতীয় পর্বের পদক বিজয়ীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া অনাবাসিক ক্যাম্পের ফলাফল ও পারফরম্যান্স টেস্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ দল নির্বাচিত করা হয় এবং ফিলিপাইনের ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত ২০তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দল প্রথম অংশগ্রহণ করেই একটি স্বর্ণপদক,দুইটি হাইলি কমেন্ডেড পদক এবং একটি টেকনিক্যাল পদক অর্জন করে।

একই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে আয়োজিত ২য় বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করে আইসিটি ডিভিশন, বিকাশ এবং রুপালী ব্যাংক লিমিটেড। এবারের জাতীয় পর্বের পদক বিজয়ীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ১ম বিডিআরও আবাসিক ক্যাম্প। ক্যাম্পের ফলাফল ও পারফরম্যান্স টেস্টের মাধ্যমে ১৫ জন শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশ দলের জন্য নির্বাচিত করা হয়,যারা ২১তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে।আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াড দলের রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদান,থাইল্যান্ডে যাতায়াতসহ সকল পৃষ্ঠপোষকতা করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। এ বছর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২১তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডেও বাংলাদেশ দল একটি স্বর্ণপদক, দুইটি রৌপ্য, ছয়টি ব্রোঞ্জ এবং একটি কারিগরি পদকসহ মোট ১০টি পদক অর্জন করে।

একইভাবে ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই অনলাইনেই আয়োজিত হয় ৩য় বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড। জাতীয় পর্বের পদক বিজয়ীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া অনাবাসিক আন্তর্জাতিক দল নির্বাচনী ক্যাম্পের ফলাফল ও পারফরম্যান্স টেস্টের মাধ্যমে ১৯ জন শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশ দলের জন্য নির্বাচিত করা হয়,যারা ২২তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে অনলাইনে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াড দলের রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদানসহ সকল পৃষ্ঠপোষকতা করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। এবং অনলাইনে অনুষ্ঠিত ২২তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডেও বাংলাদেশ দল দুইটি স্বর্ণপদক, দুইটি রৌপ্য, পাঁচটি ব্রোঞ্জ এবং ছয়টি কারিগরি পদকসহ মোট ১৫টি পদক অর্জন করে। বহু সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েও বাংলাদেশ দলের এ অর্জন আমাদের জন্য গৌরব বয়ে এনেছে।

উল্লেখ্য, এবছর ৪র্থ বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড ২০২১ এর আয়োজক বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স এন্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক। বাস্তবায়ন সহযোগী বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। সহযোগিতায় বাংলাদেশ ফ্লায়িং ল্যাবস, মাকসুদুল আলম বিজ্ঞানাগার (ম্যাসল্যাব), কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেড, ইএমকে সেন্টার ,আম্বার আইটি এবং এসএসএলকমার্জ।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন