টেকভিশন ডেস্ক: বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর উদ্যোগে গত ১১ অক্টোবর ২০২০ তারিখে ‘Software as a Service for SMEs’ শীর্ষক সফটওয়্যার প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর ও জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারহানা এ রহমান; এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সফিকুল ইসলাম ও মহাব্যবস্থাপক মোঃ সিরাজুল হায়দার এনডিসি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বেসিস স্থানীয় বাজার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল।
ফারহানা এ রহমান স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা অনুষ্ঠানের সূচনা করেন এবং তিনি এসএমই উদ্যোক্তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে সামনে এগিয়ে যেতে পারে তার ব্যাপারে ধারণা দেন। করোনাকালীন সময়ে প্রযুক্তির ব্যবহার বহুগুণে বেড়েছে। ই-কমার্স খাতে টেকনোলোজির ব্যবহার বর্তমান সময়ে পণ্যের খরচ কমিয়ে এনেছে। এসএমই উদ্যোক্তারা সফটওয়্যার ব্যবহারে এখনো পিছিয়ে আছে, যার ফলে তারা সবসময় ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল পায় না। এক্ষেত্রে সাস মডেল এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য আশার নতুন কিরণ। এছাড়াও ডিজিটালাইজেশনের ব্যবহার উদ্যোক্তাদের স্বল্প মূলধন বিনিয়োগে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। ইনভেন্টরি মডেল ব্যবহার করে এসএমই উদ্যোক্তারা saas.basis.org.bd লিঙ্ক-এ প্রবেশ করে সফটওয়্যারগুলো বিনামূল্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যবহার করতে পারেন। তিনি এসএমই উদ্যোক্তাগণ যাতে সাস মডেল ব্যবহার করে এগিয়ে যেতে পারে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সৈয়দ আলমাস কবীর তার বক্তব্যে বলেন, আজকের এই উদ্যোগ এসএমই উদ্যোক্তাগণের জন্য সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। এই ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও বজায় খাকবে। বিগত ৬ মাসে লকডাউনে আমাদের জীবনধারা থেমে থাকেনি। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, বিনোদন, আলোচনা-সভা সবকিছুতেই প্রযুক্তির উপর আমাদের যে নির্ভরশীলতা সেটি দেশের মানুষ অনুধাবন করেছে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কম খরচে কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য আইটি বা সফটওয়্যার এর উপর যে নির্ভরতা সেটি আরো গতিশীল করতে সাস মডেল এগিয়ে এসেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে মন্দা দেখা দিয়েছে তা নিরসনে করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অপারেটিং এক্সপেন্স (অপেক্স) নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবে। আর তা শুধু ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করেই সম্ভব। বেসিসের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে এসএমই উদ্যোক্তাগণ এ ক্ষেত্রে মানসিকভাবে আশ্বস্ত হবে। সুদূর ভবিষ্যতে ডিজিটাইলাইজেশন, টেকনোলোজি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-এর ব্যবহার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নপুরণে দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি সরকারের প্রতি প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সুলভ মূল্যে ভালো কোয়ালিটি সম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ সরবারহের জন্য আহ্বান জানান। এসএমই খাতে উদ্যোক্তারা দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নতির মেরুদণ্ড। এছাড়াও ডিজিটাইলাইজেশন, আইটি অটোমেশন ক্ষেত্রে এসএমই খাতের জন্য সহজ শর্তে বিশেষ ঋণ সুবিধা প্রদানের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশনের সাথে আলোচনা করে সরকারকে প্রস্তাব দিতে চান।
মোঃ সিরাজুল হায়দার এনডিসি বলেন, বেসিস ও এসএমই ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আইটি ও সফটওয়ারে বিষয়ে এসএমই উদ্যোক্তাদের অবহিত করতে আজকের এই আয়োজন। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার, আইটি টুলস, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার সম্পর্কে জানতে হবে, নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। তিনি বেসিস সভাপতিকে এই ধরনের আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান।
মোঃ সফিকুল ইসলাম বর্তমান এই পরিবর্তিত অবস্থায় বেসিসের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তিনি উদ্যোক্তাদের প্রতি অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে উদ্ভাবনী উপায়ে চিন্তা করতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাজার সম্প্রসারণের উপর ভিত্তি করে অনলাইন ব্যবসায় সক্ষমতা বাড়াতে হবে। করোনা পূর্ব সময়ে অনলাইন ব্যবসার বাজার ৭-১০% থেকে বর্তমানে ৪০-৫০ % এ উন্নীত হয়েছে। ভবিষ্যতে এ হার আরো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। বাজার সম্প্রসারণে আয় বাড়ানো না গেলে সমস্যার সৃষ্টি হবে। বিক্রয় বৃদ্ধি করে পার ইউনিট কস্ট বাড়াতে টেকনোলোজি ব্যবহার বাড়াতে হবে। দুর্গম এলাকার উদ্যোক্তাদের নেটওয়ার্ক সক্ষমতা বাড়াতে, আধুনিকায়ন করতে সরকারের বাস্তব পরিকল্পনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সকলের সম্মিলিত সহযোগিতায় এসএমইরা দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল করতে সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠানে শতাধিক এসএমই উদ্যোক্তাগণ অনলাইনে অংশগ্রহণ করেন। বেসিস সচিবালয়ের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স নির্বাহী মুন ম. রাজীব। বেসিস ও এসএমই ফাউন্ডেশনের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ থেকে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।