আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও চাওয়া পাওয়া – শাহ্ নেওয়াজ

মোঃ শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার।

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: শিক্ষা মানুষকে আলোর পথ দেখাবে, পথের সঠিক নির্দেশনা দিবে, মানুষের মধ্যে থাকা সুপ্ত প্রতিভা জাগিয়ে তুলবে, সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করবে ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আমরা জানি শিক্ষা জাতীর মেরুদন্ড এটি ছাড়া সবাই অচল। তাইতো আমাদের সবার প্রত্যাশা থাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষিত জাতিতে পরিনত করা এবং জাতীর মেরুদন্ড শক্ত করা। শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মনুষ্যত্ব অর্জন করা, এটা হচ্ছে জাতীয় উন্নয়নের পূর্বশর্ত। কিন্তু বর্তমান অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় আমাদের এই চাওয়াটি তথাকথিত চাওয়া প্রকৃত নয়। সন্তান যেন মানুষের মত মানুষ হয় এটি শুধু বাহ্যিক চাওয়া।

আমরা ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই মানবিক মূল্যবোধ কতটুকু জায়গা নিতে পেরেছে। মানব শিশু জন্মের পর থেকে মানবিক ও সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার মাধ্যমে দ্বিতীয় বার মানুষ হিসেবে জন্ম নিতে হয়। একটি মানব সন্তান জন্মের পর থেকেই শিক্ষা জীবন শুরু করে প্রথমে তার মা-বাবা,ভাই-বোন, পাড়া-প্রতিবেশী সবার কাছ থেকে সামাজিক, মানসিক, পারিবারিক এবং ধর্মীয় মুল্যবোধ তথা আমাদের সকল চাওয়া সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করে। এই শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের প্রতি ও আল্লাহর সৃষ্টিকুলের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠবে। বর্তমানে এই ইট কাঠের সমাজ ব্যবস্থায় আমরা কি তা পারছি। যদি পেরে থাকি তাহলে এত সামাজিক অবক্ষয় কেন। আমরা কি তাহলে ব্যর্থতার দিকে যাচ্ছি। যদি তা হয় তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ খুবই বিপদ সঙ্কুল পথে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় আমরা যদি প্রতিটি পিতা-মাতাকে জিজ্ঞাসা করি সন্তানের প্রতি আপনার চাওয়া পাওয়া কি? আমরা সবাই বলবো সন্তান যেন মানুষের মত মানুষ হয়।

এখানটাতেই আমাদের সমস্যা আমরা চাই কিন্তু এ চাওয়া পূরনের জন্য যে শুভ সূচনা দরকার সেটা করিনা। আমি মনে করি আমাদের বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা উচ্চ মার্গিয়। আমরা মানবিক ও মানসিক শিক্ষার থেকে মেধা বিকাশের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব বেশী দিয়েছি। তাইতো পরীক্ষার পর আমরা ফলাফল উৎসবেমেতেউঠি।আমাদেরভবিষ্যৎ প্রজন্মযতউপরেরশ্রেণীতেপড়তে যায় তাদেরকে তত বেশী তত্ত¡ীয় ও গানিতিক সমস্যা সমাধান করতে হয়।

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা একটা নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে বাচ্ছারা পড়াশুনা করে সার্টিফিকেট নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে এবং আগামী দিনগুলোতে ও বের হবে। আমাদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগের অভাব নাই। কিন্তু সত্যিকার অর্থে সজ্জল বা মানবিক মানুষের বড়ই অভাব। বর্তমান অভিবাবক শ্রেণী ও সমাজ বা রাষ্ট্র চায় মানবিক ও খাঁটি মানুষ অর্থাৎ যারা ভবিষ্যতে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সমাজের বিভিন্ন অন্যায় অবিচার, জুলুম ও অপরাধের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে। অভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে যারা মানুষের অধিকার সত্য ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পারবে তারাই সত্যিকার অর্থে মানবিক ও খাঁটি মানুষ। আমরা অভিভাবকগন সহ আমাদের সমাজ রাষ্ট্র এ ধরনের মানুষের প্রত্যাশা করে থাকি।

তাই আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় মানবিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিয়ে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সিলেবাস প্রণয়ন ও জাতী গঠনে মনোনিবেশ করতে হবে।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবক কর্মকর্তা সকলের একটাই চাওয়া ভালো রেজাল্ট করা অর্থাৎ হচ্ছে বেশী নম্বর এবং উচ্চতর গ্রেড ইত্যাদি। ছাত্র-ছাত্রীরা এবার পঠিত বিষয় থেকে কি শিখলো, কতটা জ্ঞান অর্জন করলো অথবা তার জীবনের অর্জিত জ্ঞানের প্রতিফলন কি ঘটলো তা কেউ আমরা যাচাই করিনা।

আমরা প্রত্যাশা করতেই পারি শিক্ষার মাধ্যমে ভাল মানুষ তৈরি হবে, তাহলে আমাদের উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। আমাদের দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন, খাদ্যহীন, ক্ষুদাথর্, চিকিৎসাবঞ্চিতথাকবেনা। আমরা সবাই সরকারি বেসরকারি, ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উৎদোগে এসকল মানবিক কার্যগুলি সম্পাদন করবো। আমাদের মাঝে থাকবে না সম্পদ আহরনের প্রতিযোগিতা। প্রত্যেকে তার অর্জিত অতিরিক্ত অর্থ সম্পদ বিভিন্ন মানবিক উন্নয়ন প্রকল্পে ও সমাজকল্যান মুলক কাজে বিনিয়োগ করবেন। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে এই মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ গুলোকে নিয়ে গর্ববোধ করবে। তাহলে আমরা পারস্পরিক বিদ্বেষ, হানাহানি, দখলদারিত্ব, সন্ত্রাসবাদ প্রতিহত করতে পারবো।

লেখক মোঃ শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার, হেড অব অপারেশন, ড্যাফোডিল ইনসটিটিউট অব আইটিচট্রগ্রাম।

 

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন