বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ এবং এর আওতাধীন সংস্থাগুলোর নেওয়া প্রকল্প মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি কমিটিও গঠন করেছে আইসিটি বিভাগ। কিন্তু কমিটির প্রত্যেকেই আইসিটি বিভাগ ও এর আওতাধীন সংস্থার কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি। তাই এই কমিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খবর প্রথম আলো।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কমিটিতে বিভাগের বাইরের কেউ না থাকায় মূল্যায়নের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশের কথা শুনলেও এ ক্ষেত্রে অনেক দুর্নীতি এবং অনিয়ম হয়েছে। যে পরিমাণ অর্থ এসব প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়েছে, তার সুফল পুরোপুরিভাবে জনগণ পায়নি। তাঁরা দুর্নীতির জায়গাগুলো প্রাথমিকভাবে তদন্ত করছেন।
আইসিটি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিভাগ ও আওতাধীন সংস্থাগুলোর ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে ২১টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন, যার বরাদ্দ ২ হাজার ৫১১ কোটি টাকার বেশি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসব প্রকল্প মূল্যায়নের জন্য যে ৯ সদস্যের কমিটি হয়েছে, তাতে আইসিটি বিভাগের বাইরের কোনো সদস্য বা প্রতিনিধি নেই।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর প্রথম আলোকে বলেন, এখানে তৃতীয় পক্ষ কাউকে রাখতে হতো। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সংশ্লিষ্ট কাউকে রাখা যেত। শুধু নিজেদের দিয়ে করালে সেখানে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
এ বিষয়ে আইসিটি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব ছিল, কমিটিতে একজন করে প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞ, নিরীক্ষাবিশেষজ্ঞ এবং প্রকিউরমেন্ট বিশেষজ্ঞ থাকবেন।’ বর্তমান কমিটিতে এই বিশেষজ্ঞরা না থাকার বিষয়ে তিনি জানান, এটা দ্রুতই তাঁরা সংশোধন করে দেবেন।
বিভাগের বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর লক্ষ্য, কার্যক্রম, সুফল বিষয়ে একটি সামগ্রিক মূল্যায়নের জন্য গত ২৮ আগস্ট ৯ সদস্যের ওই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুর রহমান। কমিটির সদস্য করা হয়েছে একই বিভাগের যুগ্ম সচিব আসপিয়া আক্তার এবং সদস্যসচিব করা হয়েছে বিভাগের উপসচিব মো. সিদ্দিকুর রহমান তালুকদারকে। এ ছাড়া কমিটিতে আইসিটি বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড (বিডিসিসিএল), কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটিজ (সিসিএ) এবং এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই) থেকে একজন করে প্রতিনিধি আছেন।
অর্থাৎ আইসিটি বিভাগের বাইরে কোনো সদস্য এই কমিটিতে নেই। যদিও কমিটি গঠনের আদেশের বলা আছে, এক বা একাধিক সদস্যকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। এই কমিটি পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পূর্ণ প্রতিবেদন জমা দেবে।
এ বিষয়ে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিউ) সাবেক মহাপরিচালক ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের কমিটিতে পরিকল্পনা বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, সিপিটিউ বিভাগের লোকবল রাখতে হয়। নয়তো গৎবাঁধা প্রতিবেদন হবে এবং সত্যিকারের চিত্র উঠে আসবে না।