তানভীর হাসান তুরান: সম্প্রতি ডঃ ইউনুসের সাথে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এবং বর্তমান বিশ্বের অন্যতম ধনী ইলন মাস্কের একটি ভিডিও আলাপ হয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় এই আলাপটা খুবই গুরুত্ব বহন করে। কারণ ফোনালাপটি এমন একটি সময় হয়েছে, যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমেরিকা সফরে রয়েছেন। যখন ভারতীয় সাংবাদিক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বাংলাদেশ সম্পর্কে উস্কানিমূলক প্রশ্ন করছেন। ঠিক সেই সময়ে এমন একটি ফোনালাপ ভারতীয় মিডিয়ার প্রোপাগান্ডায় পানি ঢেলে দিয়েছে।
ডঃ ইউনুসের সাথে ইলন মাস্কের যেই ফোনালাপ হয়, তা মূলত ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্টার লিংক এর বাংলাদেশে ব্যবসা প্রসঙ্গে। ইলন মাস্ক বাংলাদেশে তার ব্যবসা স্থাপন করতে আগ্রহী। আর ডঃ ইউনুস তাকে আইডিয়া দিয়েছেন যে কিভাবে স্টার লিংক এর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই ব্যবসা ছড়িয়ে দেওয়া যায় এবং এ থেকে এ দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী সুবিধা পেতে পারে।
যতটুকু জানা যায়, ইলন মাস্ক খুব আগ্রহ নিয়ে ডঃ ইউনূসের বক্তব্য শুনেছেন এবং বাংলাদেশে ব্যবসার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
কিন্তু আমার আলোচনার বিষয় হলো, স্টারলিংক যদি বাংলাদেশে আসে তাহলে আমরা কিভাবে লাভবান হব বা এদেশে স্টারলিংক এর ব্যবসা সাস্টেনেবল হবে কিনা? কারণ, শোনা যাচ্ছে, স্টার লিংক এর এই ইন্টারনেট সেবা বেশ ব্যয়বহুল। আসলেই কি তাই? একটু বিস্তারিত বলি।
বাংলাদেশে স্টারলিংক ব্যবসা শুরু করতে গেলে সম্ভবত তারা শ্রীলংকার মডেল ফলো করবে। গত বছর আগস্টে অর্থাৎ ২০২৪ এর আগস্ট মাসে স্টার লিংক শ্রীলঙ্কায় তাদের কার্যক্রম শুরুর লাইসেন্স পেয়েছে। খুব ব্যাপক আকারে এখনো তাদের কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে স্বল্পপরিসরে তারা কিছু সার্ভিস ওপেন করেছে সেখানে।
স্টারলিংক এর সার্ভিস মূলত দুই প্রকারের। একটি পার্সোনাল সার্ভিস এবং আরেকটি কমার্শিয়াল সার্ভিস। পার্সোনাল সার্ভিসে আপনি আপনার বাসা বাড়ি বা অফিসে লাইনটি ইউজ করতে পারবেন। এর জন্য একটি ডিভাইস কিনতে হবে এবং মাসিক চার্জ দিতে হবে। ডিভাইসের ন্যূনতম মূল্য বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। আর মাসিক চার্জ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬ হাজার টাকা।
এতে আপনি স্পিড পাবেন ২৫ এমবিপিএস থেকে ২২০ এমবিপিএস পর্যন্ত। স্বাভাবিকভাবে আপনার স্পিডের এভারেজ থাকবে ১০০ এমবিপিএস এর উপরে। বাণিজ্যিক কানেকশনের ক্ষেত্রে স্পিড থাকবে ৪০ এমবিপিএস থেকে ২২০+ এমবিপিএস পর্যন্ত। ক্ষেত্র বিশেষে তার ৩০০ এমবিবিএস পর্যন্তও হতে পারে।
এই ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, আপনি যেখানেই থাকেন না কেন হাই স্পিড ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন কোন প্রকারের ইন্টারাপশন ছাড়া।
সারা পৃথিবীতে প্রায় ১০০ দেশে স্টারলিংকের সার্ভিস রয়েছে। আমাদের সাব-কন্টিনেন্টে শ্রীলংকা ও ভুটানে তাদের সার্ভিস রয়েছে।
এই দুইটি দেশের তুলনায় বাংলাদেশে তাদের বিজনেস পটেনশিয়ালিটি অনেক বেশি। শ্রীলংকার জনসংখ্যা অনুপাতে তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর শতকরা হার যদিও আমাদের থেকে বেশি কিন্তু সংখ্যা অনুপাতের হিসাবে তাদের ব্যবহারকারীর সংখ্যা কম। শ্রীলংকার জনসংখ্যা আড়াই কোটি। আর তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা ৫২% অর্থাৎ ১ কোটি ৩০ লক্ষ। আর বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৮ কোটি আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪৫% অর্থাৎ ৮ কোটি ১০ লক্ষ প্রায়। তাই যেকোন বিবেচনায় বাংলাদেশের স্টারলিংক এর ব্যবসা অনেক বেশি লাভজনক।
এবারে আসুন, স্টার লিংক এর ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা কিভাবে লাভবান হব? বিটিআরসি এর ‘এক দেশ এক রেট’ অনুযায়ী একটি ইন্টারনেট কানেকশনের সর্বোচ্চ শেয়ার কানেকশন হবে ১ঃ৮ রেশিওতে। অর্থাৎ ৫ এমবিবিএস কানেকশন তারা ৮ জনকে ভাগ করে দিবে। এতে আপনি পাচ্ছেন ০.৬২৫ এমবিপিএস স্পিড। আর এর জন্য আপনাকে মাসিক খরচ করতে হচ্ছে নূন্যতম ৫০০ টাকা। অর্থাৎ ৫০০ টাকা খরচ করে আপনি ১ এমবিপিএস এরও কম ইন্টারনেট স্পিড পাচ্ছেন।
এখন আপনার এলাকাতে যদি স্টার লিংক এর একটি ডিভাইস বসানো যায়, যার অ্যাভারেজ স্পিড ১০০ এমবিপিএস আর সেটি যদি আপনারা ২০ জন ভাগ করে নেন তাহলে আপনাদের খরচ কেমন হবে?
ধরুন ডিভাইসের মূল্য ৪৫০০০ টাকা। ২০ জনে ভাগ করে নিলে এক এক জনের ভাগে আসবে ২২৫০ টাকা। যা একটি ভালো মানের টিপি-লিংক রাউটারের থেকেও কম মূল্য। মাসিক চার্জ ৬০০০ টাকা। ২০ দিয়ে ভাগ করলে জন প্রতি মাসিক খরচ হবে ৩০০ টাকা। আর ১০০ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ যদি ২০ দিয়ে ভাগ করেন তাহলে পাবেন ৫ এমবিপিএস স্পিড। অর্থাৎ এখন ৫০০ টাকায় আপনি ১ এমবিপিএস এর থেকেও কম স্পিড পাচ্ছেন আর তখন ৩০০ টাকায় পাবেন ৫ এমবিপিএস স্পিড।
লাভজনক কোনটা?
লেখক: তানভীর হাসান তুরান