টেকভিশন২৪ ডেস্ক: বাংলা ভাষার ডিজিটাল বিপ্লবের অন্যতম পথিকৃৎ মেহেদী হাসান খান এবার একুশে পদক পাচ্ছেন। অভ্র কিবোর্ডের আবিষ্কারক এই প্রতিভাবান প্রোগ্রামার ও চিকিৎসক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন। বাংলা ভাষায় লেখাকে সহজতর করার ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য।
মেহেদী হাসান খানের পথচলা
মেহেদী হাসান খান ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি তার ঝোঁক ছিল। সেই আগ্রহ থেকেই ২০০৩ সালে তিনি ইউনিকোড ও এএনএসআই সমর্থিত বাংলা লেখার জন্য ফ্রি ও ওপেন সোর্স সফটওয়্যার অভ্র কিবোর্ড তৈরি করেন।
অভ্র কিবোর্ডের সৃষ্টি
২০০৩ সালের একুশে বইমেলায় বায়োস নামক একটি সংগঠনের প্রদর্শনী দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে মেহেদী সহজতর বাংলা লেখার সফটওয়্যার তৈরির পরিকল্পনা করেন। সে সময় ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা লেখার জন্য কোনো উপযুক্ত সফটওয়্যার ছিল না। তাই তিনি নিজেই সমাধান তৈরির উদ্যোগ নেন। প্রথমে মাইক্রোসফট ডট নেট ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করে একটি প্রোটোটাইপ তৈরি করলেও তা কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে পরিবর্তন করতে হয়। পরবর্তীতে ভিজ্যুয়াল বেসিক ব্যবহার করে নতুন সংস্করণ তৈরি করেন, যা বাংলা লেখার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী উদ্ভাবন হয়ে ওঠে।
২০০৩ সালের ২৬ মার্চ অভ্র কিবোর্ড প্রথমবারের মতো উন্মুক্ত করা হয়। পরে ১৫ সেপ্টেম্বর এটি ওমিক্রনল্যাব থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজেও অভ্র ব্যবহার করেছে।
জনপ্রিয়তা ও প্রভাব
অভ্র সফটওয়্যার বাংলা টাইপিং সহজ করে তোলে। এর ফলে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যবহারকারীরাও এটি ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেন। অভ্র’র ওপেন সোর্স প্রকৃতি এবং কাস্টম লেআউট সুবিধা এটি আরও জনপ্রিয় করে তোলে।
অভ্র টিমের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন রিফাত উন নবী, সিয়াম রুপালী ফন্টের নির্মাতা সিয়াম, সারিম, ভারতের নিপন এবং মেহেদীর স্ত্রী সুমাইয়া নাজমুন। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অভ্র বর্তমান অবস্থানে পৌঁছেছে।
স্বীকৃতি ও পুরস্কার
অভ্র কিবোর্ডের জন্য ২০১১ সালে মেহেদী হাসান খান তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বেসিস পুরস্কার লাভ করেন। এবার তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একুশে পদকে ভূষিত হচ্ছেন।
অভ্র বনাম বিজয়
অভ্র কিবোর্ড বিজয়ের তুলনায় অধিক ব্যবহারকারী-বান্ধব এবং ওপেন সোর্স হওয়ায় দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। এটি ফ্রি হওয়ায় ব্যবহারকারীরা সহজেই গ্রহণ করতে পারেন, যেখানে বিজয় কিবোর্ড নির্দিষ্ট লাইসেন্সের আওতায় পরিচালিত হয়।