টেকভিশন২৪ ডেস্ক রিপোর্ট: প্রায় দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রেলে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে আসছিল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস)। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি সিএনএসকে বাতিল করেছে।
অনলাইনে টিকিট বিক্রয় এবং চুক্তি নিয়ে নানা অভিযোগ ছিল প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকালে আনুষ্ঠানিকভাবে রেল ভবনে সহজে টিকিট বিক্রয়ের অনুমতি দিল রেল। এ দিন রেলপথ মন্ত্রীর উপস্থিতিতে রেলওয়ে ও সহজের মধ্যে ৫ বছর মেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। এখন থেকে ট্রেনের টিকিট বিক্রিয় করবে সহজ।
এসময় রেলভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ের ইন্টিগ্রেটেড টিকেটিং সিস্টেম (বিআরআইটিএস) ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট, সাপ্লাই, ইনস্টল, কমিশন, অপারেট, রক্ষণাবেক্ষণ কাজের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তিতে সই করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী, আর সহজের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মালিহা এম কাদির।
চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি টিকিটের জন্য সহজ লিমিটেডকে ২৫ পয়সা সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। যেখানে সিএনএসকে দিতে হতো প্রায় তিন টাকা। আগামী ২১ দিনের মধ্যে কাজ বুঝে নেবে সহজ। আগামী ১৮ মাস তারা আগের সার্ভারে (রেলওয়ের নিজস্ব সার্ভার) কাজ চালিয়ে যাবে। এরপর প্রয়োজন হলে টিকেটিং সিস্টেমে পরিবর্তন আনবে এবং নিজস্ব সার্ভারে কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘সিএনএস নিয়ে রেলের সাথে বেশ ঝামেলাও ছিল। আমাদের ভাজে অভিজ্ঞতাও হয়েছে। মামলা থেকে ধরে কত কিছুই না হয়ে গেল। এগুলো কোনো দিনই মেনে নেয়া যায় না। তারা এক একটি টিকিটের জন্য প্রায় ৪ টাকা নিতো। আর এখন সহজ নেবে মাত্র ২৫ পয়সা। টিকিট বিক্রয়ে আমরা সবচেয়ে বড় প্রশ্নের সম্মুখীন হই এবং রেলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছিল টিকিটিং ব্যবস্থা নিয়ে।
এই ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের জন্য আমরা আগেই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু অনেক বাধা অতিক্রম করে আজকের এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি। চুক্তির মাধ্যমে সেই নতুন যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছি। আমরা এখন ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করছি- আগামীতে ১০০ ভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রয় করা হবে।
তিনি বলেন, ২০০৭ সালে সিএনএসের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল রেলের। তারপর থেকে মেয়াদ বাড়িয়ে মামলা-মোকদ্দমা করে এই পর্যায়ে এসেছে। আমার আমলেও চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি আমার কাছেও আসে। আমি সেটাকে সমর্থন না করে নতুন টেন্ডার করতে বলি। সিএনএসও আবেন করেছিল। কিন্তু তারা ১ টাকা ৪০ পয়সা সার্ভিস চার্জ চেয়েছিল। আর সহজ ২৫ পয়সার কথা বলেছিল। সর্বনিম্ন হিসেবে ২০১৯ সালে কাজ পায় সহজ। এরপর সিএনএস হাইকোর্টে মামলা করে। এতদিন পরে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ফলে আমাদের চুক্তি করতে আর কোনো বাধা ছিল না। কিন্তু আমাদের সার্ভিস চালু রাখতে এতদিন সিএনএসকে দেওয়া ছিল। অনেকটা বাধ্য হয়ে দিয়েছি। আমরা আশা করছি, মানুষের আর অনলাইনে টিকিট কাটতে ভোগান্তি হবে না।
এমডি মালিহা এম কাদির বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিল রেলে সেবা দেব- টিকিট বিক্রি করবো। আমাদের লাভ কত হবে না হবে, তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে রেলের মতো এত বড় একটি প্রতিষ্ঠানে আমরা কাজ করতে পারবো- এটা মাথায় নিয়েই কাজ করেছি। আমরা সফল হয়েছি। সর্বোচ্চ সেবা দিতে চাই আমরা। ২০১৪ সাল থেকে বাসের অনলাইন টিকেটিং নিয়ে আমরা কাজ করে আসছি। অনলাইনে টিকিট বিক্রি আমাদের মজ্জাগত বিষয়। মানুষকে আমরা যাতে ভালো সেবা দিতে পারি এই লক্ষ্যে কাজটি নিয়েছি।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার, অতিরিক্ত মহাপরিচালক মঞ্জুর উল আলম চৌধুরীসহ রেলওয়ে ও সহজের কর্মকর্তারা।