বুধবার, ১১ জুন, ২০২৫, ১:২৭ অপরাহ্ণ
34.9 C
Dhaka

এনএইচএসপি ‘র পাচঁটি আঞ্চলিক পর্ব সফলভাবে সম্পন্ন

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: অটোমেশন, কম্পিউটারায়ন ও ডিজিটালাইজেশনের কারণে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশেও প্রযুক্তিবিদ তথা কম্পিউটার প্রোগ্রামারদের চাহিদা বেড়েই চলেছে। আর তাই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আইসিটি ও প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি আগ্রহী করে তোলা এবং তাদের প্রোগ্রামিং দক্ষতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে শুরু হয়েছে ‘জাতীয় হাই স্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা (এনএইচএসপিসি) ২০২৫’। মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রোগ্রামিং চর্চায় উদ্বুদ্ধ করার এই প্রতিযোগিতা দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে এক উজ্জ্বল প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছ। এই আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ ৩০ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটে গত ২৯মে বৃহস্পতিবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ২৮ মে বুধবার তিনটি ভেন্যু যথাক্রমে- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত হয় এনএইচএসপিসি ২০২৫-এর আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের জুনিয়র (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি), সেকেন্ডারি (নবম থেকে দশম শ্রেণি) এবং হায়ার সেকেন্ডারি (একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) এই তিনটি ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছে এই পর্বে। সম্ভাবনাময়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রোগ্রামিং এবং প্রযুক্তি চর্চায় এই আয়োজন বিরাট ভূমিকা পালন করছে।

ঢাকা আঞ্চলিক প্রতিযোগীতায় ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী ও মানিকগঞ্জ জেলার তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। গতকাল থেকে শুরু হওয়া একটানা বৃষ্টির মধ্যেও শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকদের নিয়ে ভেন্যুতে আসতে শুরু করে। শিক্ষার্থীদের আসন গ্রহণের পর সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে তথ্য প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা এবং ৯টা ২০ মিনিটে কার্জন হলে কুইজ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কুইজ প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয় আইসিটি এবং এআই বিষয়ক সেমিনার। সেমিনারে বক্তারা বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে এআই নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে। সে তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। ভবিষ্যতে এআই ব্যবহার করে অনেক জটিল কাজ আরও শুষ্ঠুভাবে করা যাবে। আবহাওয়া থেকে শুরু করে মহাকাশ, কৃষি, শিল্প, সেবাখাতে এআই এর ব্যবহার নিয়ে কাজ হচ্ছে। আমাদের দেশের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে আছি। এসব ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে টেকসই সমাধান বের করতে হবে।

বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা এবং বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সভাপতি মুনির হাসান। আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন।

উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেন, আমাদের দেশের অভিভাবকেরা অনেক সচেতন। শিক্ষার্থীরাও কম্পিউটার ব্যবাহার করে প্রযুক্তিকে বুঝতে চেষ্টা করছে। অভিভাকদেরকে আরও সচেতন হতে হবে যেন তাদের সন্তানেরা প্রুযুক্তির অপব্যবাহার থেকে দূরে থাকে। প্রতিযোগিতা শেষে প্রোগ্রামিং ও কুইজ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে মেডেল এবং বিজয়ী সার্টিফিকেট তুলে দেন অতিথিরা। ঢাকা আঞ্চলিকে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডোরি ক্যটাগরিতে যথাক্রমে ১০জন, ১৭জন এবং ১৬ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় এবং কুইজ প্রতিযোগিতায় জুনিয়র ও সিনিয়র ক্যাটাগরিতে ৩০ জন করে মোট ৬০জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

গতকাল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত কুমিল্লা আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায়  ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও চাদঁপুর জেলার  প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী প্রোগ্রামিং ও কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। কুমিল্লা আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় কুইজের জুনিয়র ও সিনিয়র ক্যাটাগরিতে মোট ২৬জন এবং প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় জুনিয়র, সেকেন্ডারি এবং হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে সমস্যা সমাধানের ভিত্তিতে মোট ২২জনকে এবং দাবা প্রতিযোগিতায় ১২জনকে বিজয়ী নির্বাচন করা হয়। বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।  এই আয়োজনে প্রধান অতিথি কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের  চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহমুদুল হাছান বিজয়ীদের হাতে মেডেল ও সনদ তুলে দেন।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলার শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। সকাল আটটায় শিক্ষার্থীরা ভেন্যুতে আসতে শুরু করে। তারপর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর পূর্ব নির্ধারিত সময়ে শুরু হয় প্রোগ্রামিং এবং আইসিটিবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা। শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ এইচ এম কামাল, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. সুজন আলী, বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের ন্যাশনাল আরবিটার মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন।

অন্যদিকে ভোলা, বরিশাল ও ঝালকাঠি জেলার শিক্ষার্থীরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়য়ে আয়োজিত আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় প্রোগ্রামিং, কুইজসহ অন্যান্য আয়োজনে অংশ নেয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর স্বাগত বক্তব্যে প্রধান অতিথি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়য়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তৌফিক আলম শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রধান করেন। আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রাহাত হোসাইন ফয়সাল।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় টাঙ্গাইল ও গাজীপুর জেলার মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এখানে প্রোগ্রামিং ও কুইজ প্রতিযোগিতার পাশাপাশি দাবা, সাইবার সিকিউরিটি ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) বিষয়ক সেমিনার আয়োজন করা হয়। সেমিনারে আলোচকেরা শিক্ষার্থীদেরকে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হতে পরামর্শ দেন। এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ মতিউর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মনির মোর্শেদ, সেমিনারে আলোচক হিসেবে ছিলেন রিসার্চ সেলের ডিরেক্টর অধ্যাপক মোস্তফা কামাল নাসির, আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের  চেয়ারম্যান অধ্যাপক মেহেদী হাসান তালুকদার।

এসবের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে সাইবার সিকিউরিটি ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) বিষয়ক সেমিনার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতা শেষে সম্মানিত বিচারকদের ফলাফলের ভিত্তিতে আঞ্চলিক পর্বের প্রোগ্রামিং, কুইজ এবং দাবা প্রতিযোগিতা এই তিনটি বিভাগের বিজয়ীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। উপস্থিত অতিথিগণ বিজয়ীদের হাতে মেডেল এবং বিজয়ী সার্টিফিকেট তুলে দেন।

ময়মনসিহে প্রোগ্রামিং, কুইজ এবং দাবা প্রতিযোগিতায় যথাক্রমে নয়জন, পচিঁশজন এবং তিনটি দলের তেরজনসহ মোট ৪৭জনকে; বরিশালে প্রোগ্রামিংয়ে একজন, কুইজে ১৫জন এবং দাবায় ১২জনসহ মোট ২৮জনকে এবং টাঙ্গাইলে প্রোগ্রামিংয়ে ১৪জন, কুইজের ৪১জন এবং দাবায় সাতটি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

এই আয়োজনকে আরও প্রাণবন্ত এবং বেগবান করতে সব আঞ্চলিক পর্বে আয়োজন করা হয় ‘বুদ্ধির লড়াই’ দাবা প্রতিযোগিতা।

শিক্ষার্থীদের এই অর্জন তাদের দক্ষতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আয়োজকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রতিটি বিভাগের বিজয়ীরা আসন্ন জাতীয় প্রতিযোগিতা অর্থাৎ এনএইচএসপিসি ২০২৫ এর জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করবে যা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিযোগিতার ফলাফল ও অন্যান্য তথ্যসহ বিস্তারিত জানা যাবে https://nhspc.org.bd এই ঠিকানায়।

জাতীয় হাই স্কুল প্রোগ্রামিং কনটেস্ট ২০২৫-এর মূল আয়োজক বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (BCC) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (ICT Division)। বাস্তবায়ন সহযোগী হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন, EDGE (Enhancing Digital Government and Economy) প্রকল্প এবং ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি (NCSA)।

এই সপ্তাহের জনপ্রিয়

টফিতে আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ দেখার সুযোগ

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: শুরু হতে যাচ্ছে আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ...

আসল এবং নকল মোবাইল ফোন চেনার সহজ ৭ টি উপায়

টেকভিশন২৪ প্রতিবেদক: বর্তমানে মোবাইল ফোন বাজারে চলছে এক তুমুল...

চ্যাটজিপিটি: বিস্ময়কর উদ্ভাবন

টেকভিশন২৪ ডেস্কঃ প্রতিনিয়তই আসছে নিত্য নতুন প্রযুক্তি। তবে কয়েক...

সর্বশেষ

টফিতে আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ দেখার সুযোগ

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: শুরু হতে যাচ্ছে আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ...

বাংলাদেশ বনাম সিঙ্গাপুর ম্যাচের টাইটেল স্পন্সর টেকনো

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: আগামী ১০ জুন ঢাকায় অবস্থিত জাতীয় স্টেডিয়ামে...

রিয়েলমির ঈদ ক্যাম্পেইনে বিজয়ীদের নাম প্রকাশ

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: তরুণদের পছন্দের কনজ্যুমার টেকনোলজি ব্র্যান্ড রিয়েলমির বহুল...

ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়া চূড়ান্ত

টেকভিশন২৪ ডেস্ক: যে কোনো নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য/উপাত্ত তার সম্পদ...

এ সম্পর্কিত

spot_img

জনপ্রিয় ক্যাটাগরি

spot_img