টেকভিশন২৪ ডেস্ক: একটি বহুভাষিক ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার প্রত্যয়ে বিটিআরসিতে উদযাপিত হলো ইউনিভার্সেল অ্যাকসেপ্টেন্স দিবস ২০২৫। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম (বিআইজিএফ) এর যৌথ আয়োজনে এবং ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাসাইনড নেমস অ্যান্ড নাম্বারস (আইক্যান) এর সহযোগিতায় আয়োজিত কারিগরি কর্মশালা ও বিশেষ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রযুক্তিবিদ, গবেষক, টেলিযোগাযোগ খাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাগণ। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে ‘বিটিআরসি.বাংলা’ ডোমেইনে বিটিআরসির নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং ইমেইল এপ্লিকেশন উদ্ধোধন করেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো: এমদাদ উল বারী।
সূচনা বক্তব্যে বিটিআরসির মহাপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিউল আজম পারভেজ ইউনিভার্সেল অ্যাকসেপ্টেন্স দিবস এর প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব তুলে ধরেন। স্বাগত বক্তব্যে বিআইজিএফ (বিআইজিএফ) এর মহাসচিব মোহাম্মদ আবদুল হক অনু .বাংলা ডোমেইন কে জনপ্রিয় করতে বিটিআরসির সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি এ সম্পর্কে বিআইজিএফ এবং বিটিআরসি’র সম্মিলিত বিভিন্ন উদ্যোগের উপর আলোকপাত করেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ বলেন, ইন্টারনেট জগতে ৪৯.২ ভাগ কনটেন্ট ইংরেজি, অথচ ইংরেজীভাষী জন্সংখ্যা পৃথীবীতে মাত্র ১৬%। ফলে বহু দেশের বহু ভাষার মানুষ তার নিজস্ব ভাষায় ইন্টারনেট কনটেন্ট ব্যবহার করতে পারছেনা। তিনি ইন্টারনেটে বাংলা ভাষা ব্যবহার এবং ইউনিভার্সেল অ্যাকসেপ্টেন্স এর প্রেক্ষাপট, এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত তথ্যবহুল উপস্থাপনা প্রদান করেন। চ্যাটজিপিটিসহ এআই মডেলগুলো ইংরেজি ও পশ্চিমা ভাষার ওপর বেশি জোর দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলায় ইন্টারনেটকেন্দ্রিক কনটেন্ট, ইন্টারফেস এবং বিভিন্ন ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। এটা আমাদের দেশ, জাতি এবং সমাজের অর্থনৈতিক, সংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত বিকাশের জন্য একান্ত জরুরী।
ইউনিভার্সেল অ্যাকসেপ্টেন্স এর কারিগরি দিক আলোকপাত করেন বিটিআরসি’র উপপরিচালক ড. শামসুজ্জোহা। তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৬ সালে নতুন করে টপ লেভেল ডোমেইন বরাদ্দ দেয়া শুরু হবে। এতে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে আগ্রহী উদ্যোক্তাসহ সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে আইক্যান এর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব সমীরণ গুপ্ত বলেন, যারা ইংরেজি ভাষাভাষি নয়, তাদের জন্য বহুভাষিক ইন্টারনেট সুবিধাটা গুরুত্বপূর্ণ। ডোমেইন সংক্রন্ত সামগ্রিক বিষয়ে, বিশেষত ইউনিভার্সেল অ্যাকসেপ্টেন্স বিষয়ে আইক্যানের এর কর্মসূচী বিষয়ে আলকপাত করে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত বিষয়ে যেকোনো প্রকৌশল ও কারিগরি সহায়তা দিতে আইক্যান প্রস্তুত রয়েছে।
আইকান বোর্ড-এর পরিচালক জনাব সাজিদ রহমান বলেন, ইন্টারনেট সবাইকে এক সুতোয় বাধার জন্য চালু হলেও ভাষা-র কারনে অনেক ক্ষেত্রেই তা বিভক্তি তৈরি করেছে। আমরা যদি অন্তর্ভূক্তিমূলক ডিজিটাল ভবিষ্যত গড়তে চাই, তবে সকল মানূষকে সমানভাবে ইন্টারনেটের সঙ্গে সম্পকৃত হবার সুযোগ দিতে হবে। এজন্য বিটিআরসি’র এই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। এর ফলে সকল স্টেকহল্ডারদের নিয়ে কার্যকরভাবে ইউনিভার্সেল অ্যাকসেপ্টেন্স এর ইকোসিস্টেম তৈরি করা সম্ভব হবে।
ইন্টারনেট জগতে যেকোনো ভাষার সার্বজনীন ব্যবহারের কারিগরী চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন বিটিসিএল এর ডোমেইন ডিভিশনের ম্যানেজার মোস্তফা আল মামুন এবং আম্বার আইটি’র মাহফুজুর রহমান। তারা জানান, ইউনিভার্সেল অ্যাকসেপ্টেন্স এর সফল বাস্তবায়নে সফটওয়্যার ও কারিগরী প্রকৌশল উন্নয়নে অব্যাহতভাবে কাজ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো: এমদাদ উল বারী বলেন, যোগাযোগের জন্য মাতৃভাষার বিকল্প নেই। অন্য ভাষায় নিজেকে প্রকাশ করতে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই তা আরো জটিল হয়ে ওঠে। অনেক সময়ই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় অন্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ডিজিটাল ডিভাইড কমিয়ে আনতে কানেক্টিভিটি ও ইন্টারনেট ব্যবহার- এই দুই ক্ষেত্রেই ব্যবধান কমিয়ে আনতে হবে।
কারিগরি সেশনে ভাষার সার্বজনীন ব্যবহার (UA), ইন্টারন্যাশনালাইজড ডোমেইন নেইম (IDN) এবং ইমেইল অ্যাড্রেস ইন্টারন্যাশনালাইজেশন (EAI) বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেন ICANN-এর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের টেকনিক্যাল এনগেজমেন্ট ম্যানেজার চাম্পিকা উইজয়তুনগা।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার মাহমুদ হোসেন, বিআইজিএফ চেয়ারপার্সন মোহাম্মদ আমিনুল হাকিমসহ বিটিআরসির উধ্বর্তন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।