টেকভিশন২৪ ডেস্ক: গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ মাস পার হলেও আইসিটি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং সাইবার সুরক্ষা আইনের হয়রানিমূলক মামলাগুলো বাতিলের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও অগ্রগতির অভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী এবং মানবাধিকারকর্মীরা। তাঁরা এসব মামলা বাতিল, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এই দাবি তোলা হয়। ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪: রাষ্ট্রীয় নিবর্তনব্যবস্থা বহাল ও ভুক্তভোগীদের বয়ান’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে ভয়েস ফর রিফর্ম এবং ডিএসএ ভিক্টিম নেটওয়ার্ক। সভায় ভুক্তভোগী ও মানবাধিকারকর্মীরা তাঁদের অভিজ্ঞতা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আল আমিন হোসেন বলেন, “শিক্ষা পাঠ্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করায় আমাকে তিন মাসের বেশি জেলে থাকতে হয়েছে। আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টও ছিনিয়ে নিয়ে সেখানে মনগড়া পোস্ট দেওয়া হয়।”
আরেক ভুক্তভোগী ইশরাত জাহান জানান, “বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর দুই বছর সাত মাস কারাগারে কাটিয়েছি, অথচ পুলিশ কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি।”
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, “সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে সুরক্ষার কথা বলা হলেও এটি অস্পষ্ট। এতে আইনের অপব্যবহারের সুযোগ রয়ে গেছে। ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ ও রাষ্ট্রের ক্ষমা চাওয়ার দাবিও আমরা জানাচ্ছি।”
ভয়েস ফর রিফর্মের সহ–আহ্বায়ক শহিদুল আলমের মতে, “এই আইন জনগণের সুরক্ষার জন্য নয়, বরং এটি নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।” আইনজীবী রেজাউর রহমান উল্লেখ করেন, “আইসিটি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মানবাধিকারের পরিপন্থী ছিল, এবং সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ সেই ধারা বহন করছে।”
ডিএসএ ভিক্টিম নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক গোলাম মাহফুজ জোয়ার্দার বলেন, “এই অধ্যাদেশে প্রমাণ ছাড়াই গ্রেপ্তার করার বিধান রয়েছে, যা অসাংবিধানিক। সরকারকে দ্রুত হয়রানিমূলক মামলা বাতিল করতে হবে।”
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থনৈতিক সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া বলেন, “এই অধ্যাদেশ গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। আমরা এটি মানতে পারি না।”
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক সিমু নাসের, সালিম সামাদ, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ এবং অধিকারকর্মী তৃষিয়া নাশতারান। তাঁরা আইন সংশোধন, হয়রানিমূলক মামলা বাতিল এবং ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে জোর দেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফাহিম মাশরুর। তিনি বলেন, “অজামিনযোগ্য ধারা রাখার যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ। এই আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।”
বক্তারা সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এর অস্পষ্টতা এবং আইনের অপব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁরা দ্রুত এই আইন সংশোধন ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
সূত্র : দৈনিক সংবাদ