এনবিএমইজিএফ থেকে প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তার এখন মাসিক বিক্রি ৩৫ লাখ

মোহাম্মদ জাহিদ জুবায়ের

টেকভিশন২৪ প্রতিবেদক: দেশের অধিকাংশ শিক্ষিত তরুণ চাকরির পেছনে ছুটতে গিয়ে বেকারের খাতায় নাম লেখান। তারা দেশের সম্পদে রূপান্তর না হয়ে দেশের বোঝা হয়ে যান। তবে প্রযুক্তির অগ্রগতির এসময়ে অনেকেই চাকরির পেছনে না ছুটে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা কাজে লাগিয়ে নিজেই উদ্যোক্তা হচ্ছেন। তেমনই একজন শরীয়তপুর, সখিপুরের মোহাম্মদ জাহিদ জুবায়ের। চাকরির পেছনে না ছুটে অন্যকেই চাকরি দিচ্ছেন।

২০২০ সালে নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে ব্যবসায় উন্নতির শুরু তার। এরপর থেকে এনবিএমইজিএফের প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল বাহারের নিয়মিত ক্লাস এবং প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে থাকেন। ধীরে ধীরে তার প্রতিষ্ঠান এগিয়ে যেতে থাকে সফলতার দিকে।

করোনা কালীন সময় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও তার প্রতিষ্ঠান জেড জে ক্যাপ বর্তমানে মিরপুর- ১১তে ২০ জন কর্মচারী ও ২০ টা মেশিন নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও ৩০ টা মেশিন কিনে প্রতিষ্ঠান আরও বড় করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত তিনি সরকারি /বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্ডার পাচ্ছেন ।

জেড জে ক্যাপ এবং জেড জে গ্রান্টেড লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা জুবায়ের। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠার কারণে সংসারের বড় ছেলে হিসাবে ছোটবয়সেই শুরু হয় জীবিকার যুদ্ধ। ঘরে অসুস্থ বাবা অন্যদিকে কাছের মানুষদের অবহেলা সবমিলিয়ে নিদারুণ জীবনযাপন ছিল জুবায়েরের।

তিনি বলেন, পরিবারের কথা চিন্তা করে ১৩/১৪ বছর বয়সে পাড়ি জমাই ঢাকাতে। শুরু হয় জীবনে বেঁচে থাকার লড়াই। টাকাটা খুব প্রয়োজন তাই সব কাজকে ভালোবেসে গেছি। কখনো এটা ভাবিনি যে কেউ ছোট ভাববে। কাজ আমার কাছে কাজই।

একটা সময় এসে; অন্যের প্রতিষ্ঠানে কাজ না করে নিজেই প্রতিষ্ঠান তৈরি করার মনবাসনা শুরু হলো। সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া। মাত্র ৩০ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করলাম, দুটি মেশিন কিনে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে শুরু হলো স্বপ্নযাত্রা, সে শুরু আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

ধীরে ধীরে স্বপ্নটা বড় হতে লাগলো। এরই মাঝে ২০২০- এ যখন করোনা হানা দিলো ভেঙে পড়লাম ভাবলাম ব্যবসা ছেড়ে দেব কিন্তু কোথাও সাহস পেলাম না, লকডাউনে পুরো দেশ। ঘরে বসে তখন ইউটিউবে ব্যবসায়িক /পরামর্শ বিষয়ে কিছু ভিডিও দেখতাম একদিন আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রিয় মেন্টর, ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের একটা ভিডিও দেখতে পেলাম- একটা কাজ বা একটা ব্যবসা করার জন্য কারও জš§ হয়নি’। এরপর শুরু করলাম আমার ব্যবসার দ্বিতীয় পাঠ। যুক্ত হলাম নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনে আমার ভাগ্য বদলানোর দ্বিতীয় ধাপে।

এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি জুবায়েরকে। নিজ মেধা এবং ইচ্ছাশক্তিতে আজ তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা।

যার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কাজ করছেন ২০ জন শ্রমিক। পাশাপাশি যত বড় ধরনের ইভেন্টের কাজ হয় বড় ফ্যাক্টরিতে করিয়ে থাকি। স্বপ্নটা এখন আরও বড়। এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। জেড জে ছড়িয়ে পড়বে দেশ ছাড়িয়ে দেশের বাইরে, সবাই এক নামে চিনবে। নিজের অভিব্যাক্তি জানাচ্ছিলেন জুবায়ের।

নিজের বলার মতো একটা গল্প আপনাকে কি দিয়েছে ও কতটা পরিবর্তন করেছে? কি কি শিখেছেন জানতে চাইলে জুবায়ের জানান- নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন  আমাকে সহজেই দেশসহ দেশের বাইরে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। একজন ভাল মানুষ হওয়াতে সাহায্য করেছে এ ফাউন্ডেশন, পাশাপাশি কথা বলার যে জড়তা ছিলো সেটিও কাটিয়ে নিচ্ছি।

মানুষকে কখনো ঠকানোর চিন্তা করি নাই, আমার ফ্যামিলি আমার আত্মিয়-স্বজন সবাইকে নিয়ে আমার এগিয়ে চলা। আমার কথায় যেন কেউ কষ্ট না পায় এ দিকটা সবসময় মনে রাখি, নিজেকে একজন ভালো মানুষ দাবি করতে পারি এটাই আমার চাওয়া বলছিলেন এ উদ্যক্তা।

৫ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান জানতে চাইলে তিনি বলেন- একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চাই। আমার মেন্টর প্রিয় ইকবাল বাহার স্যার সবসময় একটি কথা বলেন, একা বড় হলা, অনেক বড় ব্যবসায়ী হলাম, অনেক টাকা হল, এটা আসলে বড় হওয়া নয়। আমার এ বড় হওয়ার সঙ্গে যদি আরও দশজনকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে পারি তবেই বড় হতে পারব। 

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন